ছাগলকাণ্ডে দেশজুড়ে আলোচিত এনবিআর সদস্য মতিউরের কানাডা প্রবাসী মেয়ে ফারজানা রহমান ইপ্সিতা তার স্বজনের কাছে ভয়েস মেসেজে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাঠানো বিস্ফোরক ভয়েস মেসেজগুলো ফাঁস হয়ে গেছে।
মেয়ে ইপ্সিতা তার এসব ভয়েস মেসেজে আজকের এ পরিস্থিতির জন্য দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী-সন্তানদের দায়ী করছেন। শুধু ইপ্সিতাই নয়, মতিউরের প্রথম স্ত্রী রায়পুরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লায়লা কানিজও মতিউরের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের পারিবারিক ভয়েস মেসেজে শোনা যায়, স্বামীকে ডিভোর্স দিতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে চাপ দিচ্ছেন মতিউরের বোন। বিশেষ করে মঙ্গলবার মতিউরের বিভিন্ন ব্যাংক ও পুঁজিবাজারের বিও হিসাব স্থগিত করার পর তারা ভেঙে পড়েন। ভাইয়েরাও চলে গেছেন আত্মগোপনে।
ইতোমধ্যে বিলাসবহুল গাড়ির ছবিসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছেন মতিউর কন্যা ইপ্সিতা। যে বাবার কল্যাণে কানাডায় তার বিলাসী জীবন, সেই বাবার প্রতিই মারমুখী কথাবার্তা বলছেন তিনি। তাদের স্বজন-শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে যেসব ভয়েস মেসেজ চালাচালি হয়েছে তার একাধিক ক্লিপ গণমাধ্যমের হাতে চলে এসেছে।
ফেসবুকে ছাগলকাণ্ড ভাইরাল হওয়া প্রসঙ্গে ইপ্সিতা তার ভয়েস মেসেজে বলেন, ‘মানুষের দোষ তো নাইরে ভাই। দেশের মানুষ তো আসলেই কষ্ট করে। এই লোকটা আমার মারে এত বড় চিট করল ভাই। আমি এক মিনিট পরপর আমার মার সঙ্গে কথা বলতাছি। আমার মা হাউমাউ করে কান্দে, ভাই কান্দে। আমার ভাই আমারে বলে, বাপ আমাদের কখনো ভালোবাসে নাইরে আপু। ভালোবাসলে সে এইভাবে চিট করত না। এখন কী করব জানিনারে ভাই। আমার আর ভাল্লাগে না। মানুষের রাগ তো আমি বুঝতে পারছি। বিকজ আপনারা অনেক ভুক্তভোগী। আল্লাহ মাফ করুক, আসলেই ভুক্তভোগী। কিন্তু আমার ফ্যামেলি, আমার, আমার মা-ভাইয়ের কোনো দোষ এখানে ছিল না ভাই। তার আছে অনেক। আমি জানি টাকাপয়সাও ইলিগ্যাল না। তার ভালো ফ্যামেলি। বিয়াও করছিল ভালো ফ্যামেলির মাইয়া। তাইলে ভালো ফ্যামেলির মাইয়ারে বিয়া কইরা তুই রাখতে পারলি না। তোর এত খারাপ লাগছে, আমার মারে ছাইড়া তুই চইলা যাইতি। তুই আমাদের চিট করলি কেন। তুই তোর চাকরি বাঁচাইতে পারবি, টাকা বাঁচাইতে পারবি। কিন্তু তুই যে আমাদের ধোঁকা দিছোস, এইটা আমরা কী করুম। আমরা কই যামু, কারে মুখ দেখামু।’
অপর একটি ভয়েস মেসেজের ক্লিপে ইপ্সিতা বলেন, ‘আমার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটা খাইয়া দিছে হ্যাকারে। ইভেন আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রবলেম করতাছে। আমার মার অ্যাকাউন্টে প্রবলেম করতাছে। আমার মা তো একজন উপজেলা চেয়ারম্যান। আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর। মনে হইতাছে আমাদের সঙ্গে গেম খেইলা ওই ফ্যামেলি (দ্বিতীয় পক্ষের) সামনে আসতে চাইতাছে। বেটার (মতিউরের) তো আসলেই টাকাপয়সা আছে। তার পুরা চৌদ্দ গোষ্ঠী ভালো বিজনেজ কইরা যাইতেছে। তার ভাই ভালো বিজনেজ করে। এক্সপোর্ট-ইম্পোর্টের বিজনেস। তার ছোট ভাইয়ের তিন-চারটা গার্মেন্ট। সব নিজের। তার তো কিছুর অভাব নাই। আমার কেন জানি মনে হয়, সম্পত্তির জন্য ওই সেকেন্ড ফ্যামেলি সামনে আসতে চাইছে। বাপে মনে হয় বলছে না, এখন সে আমাদের অ্যাকিউস কইরা কইরা এই কাহিনিটা করছে। নাইলে কেন করবে। এখন কয় ছাগল সে কিনে নাই। ছাগল বউয়ের জন্য কিনছে, বউ পছন্দ করছিল। অথচ শুরুতে কইছিল বাবা পছন্দ করছে। শুরু কী করছে পোলায়।’
জানা যায়, মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজও আত্মগোপনে আছেন। ঈদের পর থেকে তিনি উপজেলা পরিষদের অফিসে যাওয়া থেকে বিরত রয়েছেন।