ঢালিউডে রাজত্ব এখন রাজের
সাফল্যে গা ভাসিয়ে দিয়ে স্রোতে চলতে চান না রাজ। চান ভালো কাজ দিয়েই রাজত্ব করতে
‘কর্মের মধ্যেই নিহিত থাকে ভাগ্যের বীজ। কাজগুলো নিয়তিতে পরিণত হয়।’- উক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস. ট্রুম্যানের। ঢাকাই ছবির এই সময়ের আলোচিত অভিনেতা শরীফুল রাজের বেলায়ও উক্তিটি যেন যথাযথ। নিজের কাজ দিয়েই যেন ভাগ্য নির্ধারণ করে নিলেন তিনি। পরপর জুটল হিটের তকমা। শুধুই কী হিট! সুপার ডুপার বাম্পার হিট! মানুষের মুখে মুখে এখন রাজ বন্দনা।
সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে রাজত্ব চলবে তাঁর। অথচ শরতের এক বিকেলে যখন শরীফুল রাজের সঙ্গে কথা হয় তখন তিনি জানালেন মানুষ এভাবে তাঁকে বরণ করে নেবে, তাঁর অভিনয় এভাবে মুগ্ধ করবে, এভাবে দর্শকদের প্রাণে জায়গা করে নেবে- তা যেন স্বপ্নেও ভাবেননি। মূলত মানুষ যা ভাবে অধিকাংশ সময় তার বিপরীতটাই হতে দেখা যায়। রাজ যা ভাবেননি তাই হয়েছে ।
রাজের ভাষ্য, ‘মানুষের এমন ভালোবাসা পাব তা ছিল প্রত্যাশার বাইরে। মডেলিং করতাম। সেখান থেকে অভিনয়ে আসি। যাঁরা আমার কাজের গ্রাফ দেখবেন, তাঁরা বুঝবেন কখনও এমন কাজ করতে চাইনি, যা দর্শকদের ঠকানো হবে। সব সময় গল্পকে প্রাধান্য দিয়েছি। তার প্রাপ্তিটা দর্শক আমাকে দিচ্ছে। কৃতজ্ঞতায় মাথা নুয়ে আসছে আমার।’
ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া রাজ অভিনীত ‘পরাণ’ ছবি দেখতে উপচে পড়ল দর্শক। ছবিটির প্রযোজক জানালেন, ছয় সপ্তাহে এই ছবি মূলধনের পাচগুণ টাকা তুলে এনেছে। যা বাংলা ছবির বেলায় ইতিহাসই বলা যায়! এই ইতিহাসের অন্যতম নায়ক হচ্ছেন রাজ। এই ছবির মাধ্যমে রাজকে নতুন করে চিনলেন দর্শক। তৈরি হলো রাজের বিশাল ভক্তশ্রেণী। যারা রাজকে হলে দেখেই চিৎকার করে উঠা শুরু করল। রাজ ভাই.. রাজ ভাই…। শুরু হলো রাজের নতুন রাজ্য, নতুন পথচলা।
ঈদের পর থেকে আজ অব্দি ‘পরাণ’ ও ‘হাওয়া’ ছবির টিকেট সঙ্কট যেনো কাটছেই না। এই দুই ছবিরই অন্যতম মধ্যমণি হচ্ছেন শরিফুল রাজ।
রাজের বড় পর্দায় যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে রেদওয়ান রনির ‘আইসক্রিম’ ছবির মাধ্যমে। মুক্তির পর প্রথম ছবিতেই খানিকটা আলোচনায় আসেন এই নবাগত। মাঝে এক বছর অভিনয় করেননি। আবার র্যাম্প, স্থিরচিত্রের মডেলিংয়ে ফিরে যান তিনি। পরের বছর ২০১৭ সালে তানিম রহমানের ‘ন ডরাই’ ছবিতে অভিনয় করে নতুনভাবে সবার দৃষ্টি কাড়েন এই অভিনেতা।
রাজ অভিনীত আরও কিছু ছবি রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়। এর মধ্যে রয়েছে রায়হান রাফির ‘দামাল’ ও নিয়ামুল মুক্তার ‘রক্তজবা’। দুটি ছবি নিয়ে প্রত্যাশার কথা জানালেন রাজ। ইতোমধ্যে ‘দামাল’ এর মুক্তির তারিখও জানানো হয়েছে। আগামী ২৮ অক্টোবর মুক্তি পাবে ছবিটি। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা ফুটবল টিমের সত্য ঘটনার সঙ্গে ফিকশনের আশ্রয় নিয়ে নির্মিত হয়েছে ছবিটি। এই ফুটবল টিমের একজন দুর্দান্ত খেলোয়ারের ভূমিকায় অভিনয় করছেন রাজ। ছবিটি মুক্তি পেলে রাজের ঝুরিতে আরও একটি ভালো কাজ যুক্ত হবে। ছবিটির প্রকাশ পেয়েছে এর ২ মিনিটের ট্রেলার। প্রকাশের পর পরই এর সিনেমাটোগ্রাফি, বিজিএম, কালার গ্রেডিংসহ নির্মাণ প্রশংসিত হচ্ছে।
নায়কের ভাষ্য, ‘পরাণ ও হাওয়ার পর আমার আগামী ছবিগুলোও দর্শকপ্রিয়তা পাবে বলে আমার বিশ্বাস। কারণ প্রতিটি ছবি গল্পনির্ভর। নির্মাতারাও মেধা ও যত্ন নিয়ে কাজ করেছেন। কোনো ছবির বেলাতে একটুও ছাড় দেননি কেউ। পরিচালক থেকে প্রডাকশন বয় পর্যন্ত সবাই নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে গেছেন।’
আমি কোনো দিনই মনের বিরুদ্ধে ও সংখ্যা হিসেব করে বা কাজ করিনি। করবোও না। সিনমার অসংখ্য চিত্রনাট্য প্রস্তাব পেয়েও করা হয়নি। সব করলে হয়তো আজকে পরাণ ও হাওয়ার মতো চলচ্চিত্র করার সুযোগ পেতাম না।’
নতুন ছবির প্রস্তাব এলে যদি গল্প বা বা চরিত্র ভালো না লাগলেও অনেক নায়ককেই শুধু প্রযোজক বা নির্মাতার মুখের দিকে তাকিয়ে করতে হয়। না করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে রাজ আলাদা। তিনি গল্প ও চরিত্র ভালো না লাগলে না সুন্দর করেই এড়িয়ে যেতে পারেন বিষয়টি। রাজ বলেন, ‘ ভালো লাগার বিপরীতে গিয়ে কখনও কাজ করিনি। করবোও না। বরং গল্প ও চরিত্র ভালো লাগলে আমি পারিশ্রমিকের চিন্তা করি না। প্রয়োজনে বিনাপারিশ্রমিকেও কাজটি করতে চাই বা চাইবো। আর ভালো না লাগলে বিনয়ের সঙ্গে না করেও দিতে পারবো।’
এদিকে ব্যক্তিজীবনেও রাজের বৃহস্পতি তুঙ্গে। পরীমণিকে বিয়ে করার একের পর এক সফলতা পাচ্ছে। বাড়ছে তারকাখ্যাতিও। গেল সপ্তাহে বাবা হয়েছেন তিনি। রাজ-পরীর ঘরে এসেছে রাজ্য। তাইতো রাজ চলতি বছরকে সবচেয়ে সফল বছর হিসেবেই ধরছেন। তিনি বললেন, ‘মা-ছেলে দুজনই সুস্থ ও ভালো আছে। বাসায় সারা দিন ছেলের সঙ্গেই আমরা সময় কাটাচ্ছি। আমাদের পরাণের একজন রাজ্যকে পেয়ে সারা রাজ্যের আনন্দ-খুশি বয়ে যাচ্ছে জীবনে।’