চলতি সপ্তাহের শুরুতে ভারতীয় একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতে পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সীমান্ত হত্যা এবং তিস্তার পানি বণ্টনসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন। এসব বিষয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান এই উপদেষ্টার মন্তব্য ভালোভাবে নেয়নি নয়াদিল্লি।
ড. ইউনূস-মোদির বৈঠকের প্রস্তাবের বিষয়ে অবগত সূত্রের বরাত দিয়ে শনিবার ভারতের ইংরেজি দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, চলতি সপ্তাহের শুরুতে ভারতীয় একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্য ঘিরে বৈঠকটি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
সূত্র জানায়, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ড. ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তবে ভারত সরকার এখনো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি এবং নিউইয়র্কে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের জন্য মোদির এজেন্ডা এখনো নির্ধারণ করা হচ্ছে।
এর আগে ভারতে নির্বাসিত অবস্থায় বাংলাদেশ নিয়ে মন্তব্য করায় চলতি সপ্তাহে এক সাক্ষাৎকারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করেন অন্তর্বর্তী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশ ভারতের কাছে তার হস্তান্তর চাইতে পারে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সব রাজনৈতিক দল ‘ইসলামপন্থী’ এই ধারণা থেকে ভারতের বের হয়ে আসা উচিত।
ড. ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ ফেরত না চাওয়া পর্যন্ত ভারত যদি তাকে (শেখ হাসিনা) রাখতে চায়, তবে শর্ত হবে তাকে চুপ থাকতে হবে। ভারতে বসে তিনি কথা বলছেন এবং নির্দেশনা দিচ্ছেন। এটা কেউ পছন্দ করছে না। এটা আমাদের বা ভারতের জন্য ভালো হবে না।’
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে ‘বেশ দৃঢ়ভাবে’ বলা হয়েছে যে হাসিনার চুপ থাকা উচিত। কারণ, ‘তাকে সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে এবং তিনি সেখান থেকে প্রচারণা চালাচ্ছেন’।
ড. ইউনূসের বক্তব্যের বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছে, এ ধরনের বক্তব্য দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনুকূল নয়।
ভারতের নেতৃত্ব বলছে, ৫ আগস্ট পদত্যাগের পর সংক্ষিপ্ত নোটিশে শেখ হাসিনাকে ভারতে আসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে প্রত্যর্পণের জন্য বাংলাদেশের সম্ভাব্য অনুরোধের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার তিন দিন পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেওয়া ড. ইউনূস ১৬ আগস্ট মোদির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। এ সময় মোদি আগের সরকারকে পতনের পর বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ড. ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানান। তখন ইউনূস বলেছিলেন, বাংলাদেশ সব সংখ্যালঘুর নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেবে। বিগত সপ্তাহগুলোতে ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর হামলার খবরকে ড. ইউনূস বারবার ‘অতিরঞ্জিত’ বলে বর্ণনা করেছেন।
ফোনালাপে দুই নেতা জাতীয় অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন।