আগামী নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচন সামনে রেখে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির মাঠ। চলছে বাগ্যুদ্ধ। জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদের যোগ্য নন- সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের পর ট্রাম্প ও তাঁর দল রিপাবলিকান পার্টির সমর্থকদের ‘চরমপন্থি’ আখ্যা দিয়েছেন ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট বাইডেন। রিপাবলিকানরা যুক্তরাষ্ট্রকে পিছিয়ে দিতে চায় দাবি করে মধ্যবর্তী নির্বাচনে তাদের প্রত্যাখ্যানের আহ্বানও জানান তিনি। একই সঙ্গে ট্রাম্প ও রিপাবলিকানরা দেশটির গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলেও মন্তব্য করেন বাইডেন।
বৃহস্পতিবার ফিলাডেলফিয়ায় দেওয়া ভাষণে ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন (এমএজিএ)’ বা আমেরিকাকে পুনরায় মহান করো- মতাদর্শ লালন করা রিপাবলিকানদের কড়া সমালোচনা করেন বাইডেন। তাদের বিরুদ্ধে নিজ সমর্থকদের লড়াইয়েও আহ্বান জানান তিনি।
ওই ভাষণে বাইডেন বলেন, রিপাবলিকানরা এমন একটি চরমপন্থার প্রতিনিধিত্ব করে, যা আমেরিকার প্রজাতন্ত্রের ভিত্তিকে হুমকির মুখে ফেলছে। বাইডেন বলেন, তারা সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলাকে আঁকড়ে ধরে। সত্যের আলোয় নয়, মিথ্যার আশ্রয়ে তাদের বসবাস।
পরাজয় মেনে নিতে না পেরে ট্রাম্পের মার্কিন ক্যাপিটলে হামলার কথা উল্লেখ করে বাইডেন হুঁশিয়ারি দেন, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই। কোনো সময়ই ছিল না। হবেও না কখনও।
বাইডেন বলেন, ট্রাম্পের নীতি আধিপত্যশীল ও ভীতিকর, যা দেশের জন্য হুমকি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র রক্ষা করতে হবে।
এর আগে ট্রাম্প বৃহস্পতিবার তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল সাইটে বাইডেনকে নিয়ে আক্রমণাত্মক পোস্ট করেন। তিনি বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে অযোগ্য বলেও উল্লেখ করেছিলেন। এর জেরেই বাইডেন চটেছেন।
ট্রাম্প লিখেছিলেন, ‘যদি বাইডেন আমেরিকাকে ফের মহান করতে না চান; যা তিনি কথা, কাজ আর বিশ্বাসও করেন না, তাহলে তিনি অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেন না!’
এর আগে গত সপ্তাহে ট্রাম্পের সমর্থকদের ‘আধা-ফ্যাসিবাদ’ পুষ্ট বলে অভিযোগ করেছিলেন বাইডেন। তাঁর এই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন রিপাবলিকানরা। ডেমোক্র্যাটরা নভেম্বরের নির্বাচনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন, যেখানে প্রতিনিধি পরিষদের সব আসন এবং সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ আসনে ভোট হবে। কারণ, এর আগেও ক্ষমতাসীনদের হারার রেকর্ড রয়েছে।
এ রকম রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক নতুন জরিপ বলছে, আজ মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ৪৭ শতাংশ ভোট পাবেন ডেমোক্র্যাটরা আর রিপাবলিকানরা পাবেন ৪৪ শতাংশ ভোট।
এদিকে, নিউইয়র্ক টাইমসের এক বিশ্লেষণে বলা হয়, ইতিহাস বলছে, ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের দল প্রায় সব সময়ই প্রথম মধ্যবর্তী নির্বাচনে হেরে যায়।
কিন্তু হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তা ও অন্য ডেমোক্র্যাটরা সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক গতির পরিবর্তনে উচ্ছ্বসিত। কারণ, বিশেষত প্রায় পাঁচ দশক আগের গর্ভপাত-সংক্রান্ত আইন বাতিল করেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাত এখন আর সাংবিধানিক অধিকার নয়। এটি এমন একটি রায়, যা উদারপন্থি এবং মধ্যপন্থিদের ক্ষুব্ধ করেছে। এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন ট্রাম্প, আর বিরোধিতা করে আসছেন বাইডেন। এটি ব্যালটে প্রভাব ফেলবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
তবে মুদ্রাস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা, কংগ্রেসে যুগান্তকারী কিছু সংস্কারসহ বাইডেন কিছু বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছেন। যেখানে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধমূলক তদন্ত হচ্ছে। আর গর্ভপাতের অধিকারের দাবিতে ব্যাপক সমর্থন রিপাবলিকানদের ব্যালটে পিছিয়ে রাখতে পারে।