তসলিমা নাসরিন
রিচার্ড ডকিন্স বিখ্যাত এভুল্যুশনারি বায়োলজিস্ট, ডারউইন বিশেষজ্ঞ, বিখ্যাত নাস্তিক। বিবর্তন নিয়ে অসাধারণ সব বই লিখেছেন। নাস্তিকতার ওপর তাঁর লেখা বই-য়ের তুলনা হয় না। কিন্তু এই রিচার্ড ডকিন্স জানিয়ে দিয়েছেন তিনি নারী এবং পুরুষ –এই দুটো লিঙ্গ পরিচয়ে বিশ্বাসী, অর্থাৎ এই দুই আইডেনটিটিতেই বিশ্বাস করেন। ট্রান্সজেন্ডার আইডেনটিটি তিনি মানেন না। তিনি মনে করেন না কোনও পুরুষ নিজেকে নারী বলে ভাবলে, সেই পুরুষ নারী হয়ে গেল, বা কোনও নারী নিজেকে পুরুষ বলে ভাবলে সেই নারী পুরুষ হয়ে গেল। ডকিন্স বলেন, একবার এক সাদা মহিলা নিজেকে কালো বলে ভাবতে শুরু করেছিল, তাই বলে সেই মহিলাকে কিন্তু কালো বলে অফিসিয়ালি মানা হয়নি, তাহলে কেন একজন পুরুষ নিজেকে নারী বলে ভাবতে শুরু করলে, নারীর পোশাক পরলে তাকে নারী বলে স্বীকৃতি দিতে হবে!
রেস যেমন শুধু সাদা কালোয় সীমাবদ্ধ নেই, নানা রকমের রেস আছে বা জাত আছে, তেমন তো জেন্ডারও নানা রকমের হতে পারে। না, রিচার্ড ডকিন্স সেটা মানবেন না। হ্যারি পটারের লেখককেও তিনি ডিফেন্ড করেছেন, কারণ জে কে রোলিংও ট্রান্সজেণ্ডার উওমেনকে উওমেন বলতে রাজি নন, তিনি ওদের জন্য উইম্বডন, উইম্বু, ইত্যাদি অদ্ভুত সব নামের প্রস্তাব করেছেন।
ডকিন্স খুবই অবাক হন, পৃথিবীর এত ছোট একটা কমিউনিটি অথবা অতি অল্প কজন তথাকথিত ট্রান্সজেন্ডার লোক সারা পৃথিবীর ডিসকোর্স বদলে দিল কীভাবে। এখন ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে কোথাও বিতর্ক করা যাবে না, বরং ট্রান্সজেণ্ডার বিষয়টিকে যে করেই হোক মেনে নিতে হবে। ট্রান্সজেণ্ডার পরিচয় না মানার জন্য রিচার্ড ডকিন্সের পাওয়া ‘সেরা হিউমেনিস্ট’ পুরস্কারটি উইথড্র করে নিয়েছে আমেরিক্যান হিউম্যানিস্ট অরগানাইজেশান। অনেক গালাগালিও তাঁকে খেতে হচ্ছে। কিন্তু তিনি অনড়। তাঁর বিশ্বাস থেকে নড়বেন না।
আমরা যারা রিচার্ড ডকিন্সকে বিশ্বাস করি, তারা তো মানুষের ট্রান্সজেণ্ডার আইডেনটিটিতেও বিশ্বাস করতে পারি। পারি না কি? নিশ্চয়ই পারি।