টাইফুন হাগিবিসে লণ্ডভণ্ড জাপান, নিহত ২৩
জাপানে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী টাইফুন হাগিবিসের আঘাতে অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছেন, নিখোঁজ রয়েছেন বেশ কয়েকজন।
গত ৬০ বছরের ইতিহাসে দেশটির সবচেয়ে ভয়াবহ এ ঘূর্ণিঝড়ে উদ্ধার কাজে অন্যান্য কর্মীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর কয়েক হাজার সেনা সদস্যও যোগ দিয়েছেন বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম বলছে, রাজধানী টোকিওর দক্ষিণে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভূমিধস হয়েছে। আশপাশের এলাকা ভেসে গেছে বন্যায়। ঝড়ের কারণে এখন পর্যন্ত ১৭ জনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে জাপানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম এনএইচকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা রোববার সকালে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা আপাতত জরুরি বৃষ্টিপাতের সর্তকর্তা লেবেল-৫ প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। তবে টোকিও, গুন্মা, সায়তামা, কানাগাওয়া, ইয়ামানাশি, নাগানো, শিজুওয়াকা, নিগাতা ও ফুকুশিমা অঞ্চলের বন্যা সর্তকতা জারি করা হয়েছে। ভূমিধস ও বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রবলবেগে আঘাত হানা এই ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এবং উদ্ধার তৎপরতায় সব মিলিয়ে মোট ২৭ হাজার সেনা সদস্য এবং অন্যান্য উদ্ধারকারী অংশ নিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সাংবাদিকদের বলেন, “এটা একটি ভয়াভয় প্রাকৃতিক দূর্যোগ। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার এসডিএফ (সৈন্য) উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে। আমরা জনগণকে জন্য সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।”
অ্যাবে বলেন, সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। প্রয়োজনে আরও সেনা উদ্ধারকাজে নামানো হবে।
এএফপি জানায়, স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যা ৭টার কিছুক্ষণ আগে রাজধানী টোকিওর দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় ইজু দ্বীপে ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার বেগে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে।
ঝড়ের আঘাতে ভেঙে পড়েছে বহু ঘর-বাড়ি, প্লাবিত হয়েছে অনেক এলাকা। বৃষ্টির কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ঝড়ের প্রভাবে টোকিওর কাছে কাওয়াসাকিতে বিভিন্ন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হাগিবিস এখন উত্তর দিকে সরে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, রোববারের পর এটি উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে ফিরে যাবে। এ ঝড়ের প্রভাবে গত ২৪ ঘণ্টায় টোকিওতে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৭০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। প্রলয়ঙ্করী এই ঝড়ের ফলে দেশটিতে চলমান রাগবি ওয়ার্ল্ড কাপের কয়েকটি ম্যাচ স্থগিত করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ৫ লাখের বেশি বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এর প্রভাবে শুক্র ও শনিবার ফুজি মাউন্টের কাছে হাকোন শহরে ১ মিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা জাপানে গত ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সর্বোচ্চ বলে রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে হাগিবিসের প্রভাবে নাগানো অঞ্চলে চিকুমা নদীর তীররর্তী অঞ্চল প্লাবিত হলে সেখানকার বাসিন্দাদের হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধার করা হয়। এর আগে ভারি বৃষ্টি বয়ে নিয়ে আসা এই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে জলোচ্ছ্বাস এবং ভূমিধস হতে পারে বলে সতর্ক করেছিল দেশটির আবহাওয়া বিভাগ।
গত মাসেই ঘূর্ণিঝড় ফাক্সাইয়ের আঘাতে জাপানের বিভিন্ন অঞ্চলে বাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ওই ঘূর্ণিঝড়ে তখন ৩০ হাজারের বেশি বাড়ি ধ্বংস হয় যার অধিকাংশই এখনও মেরামত করা হয়নি। জাপানে বছরে ২০টির মত ঘূর্ণিঝড় হলেও রাজধানী টোকিওতে সাধারণত এত বড় মাপের ক্ষয়ক্ষতি হয় না।