The news is by your side.

জেরুসালেম নিয়ে কেন এত কাড়াকাড়ি ?

0 255

পশ্চিম এশিয়ার পশ্চিম প্রান্তে ভূমধ্যসাগরের গা ঘেঁষে মাথা তোলা ছোট্ট শহর জেরুসালেম। তাকে কেন্দ্র করেই বার বার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সংশ্লিষ্ট এলাকা। বার বার রক্তে ভিজেছে পবিত্র জেরুসালেম।

হিব্রু ভাষায় জেরুসালেম শব্দের অর্থ ‘শান্তির শহর’। শহরটির সঙ্গে তিন তিনটি ধর্মের নাম জড়িয়ে আছে। খ্রিস্ট, ইসলাম এবং ইহুদি— তিন ধর্মেরই পবিত্র শহর জেরুসালেম।

ধর্মীয় তাৎপর্য, পবিত্রতাই কি বছরের পর বছর ধরে জেরুসালেমকে উত্তপ্ত করে তুলেছে? নানা সমস্যা এবং জটিলতা পশ্চিম এশিয়ার এই শহরের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে।

বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলির মধ্যে একটি জেরুসালেম। এই শহরের ইতিহাসে অনেক জয়-পরাজয়, ধ্বংস এবং পুনর্গঠনের হিসাব ডালপালা মেলেছে। শহরের আনাচকানাচে ছড়িয়ে থাকা রাস্তাঘাট, স্থাপত্য, ভাস্কর্য সেই প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষ্যই বহন করে।

জেরুসালেম শহরের প্রধান অংশে চারটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য রয়েছে, যা যথাক্রমে মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদি এবং আর্মেনিয়ানদের জন্য নির্দিষ্ট। এই শহরে কোনও একটি ধর্মের আধিপত্য যে স্বীকৃত নয়, স্থাপত্যেই তার প্রমাণ।

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দে রাজা ডেভিড জেরুসালেম দখল করেন এবং ইহুদি সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসাবে এই শহরকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁর পুত্রের আমলে জেরুসালেমে তৈরি হয় প্রথম পবিত্র উপাসনাগৃহ।

কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৬ অব্দে ব্যাবিলনীয়েরা জেরুসালেম দখল করেন এবং ওই ইহুদি মন্দির ধ্বংস করে দেন। তাঁরাই জেরুসালেম থেকে ইহুদিদের তাড়িয়ে দিয়েছিলেন বলে জানা যায়।

এর ৫০ বছর পর পারস্যের রাজা সাইরাস ইহুদিদের জেরুসালেমে আবার প্রবেশের অনুমতি দেন। তারা আবার পবিত্র শহরে গড়ে তোলে তাদের উপাসনাস্থল।

খ্রিস্টপূর্ব ৩৩২ অব্দে জেরুসালেমের ক্ষমতা দখল করেন গ্রিক সম্রাট আলেকজ়ান্ডার। এর পরের একশো বছরে জেরুসালেমে রোমান, পারসিক, আরবীয়, মিশরীয়, প্রভৃতি নানা ধর্ম ও জাতির মানুষের প্রভাব দেখা যায়।

খ্রিস্ট ধর্মের অত্যন্ত পবিত্র শহর জেরুসালেম। কারণ এই শহরেই যিশু খ্রিস্টকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল বলে শোনা যায়। জেরুসালেমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে যিশুর প্রত্যক্ষ স্মৃতি।

ইসলাম ধর্মেও জেরুসালেম শহরের আলাদা গুরুত্ব এবং তাৎপর্য রয়েছে। কারণ, ইসলাম ধর্মে উল্লিখিত প্রেরিত পুরুষদের অনেকেরই লীলাভূমি ছিল এই শহর।

১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে জেরুসালেম শহর ব্রিটেনের দখলে আসে। ১৯৪৮ সালে প্যালেস্তাইন ভেঙে ইজ়রায়েল গঠন হওয়ার আগে পর্যন্ত শহরটি ব্রিটিশদের দখলেই ছিল।

জেরুসালেমের কেন্দ্রে টেম্পল মাউন্টে ৩৫ একর জমি জুড়ে তিনটি ধর্মীয় স্থান রয়েছে। ইহুদিদের ওয়েস্টার্ন ওয়াল, মুসলমানদের ডোম অফ রক এবং আল আক্‌সা মসজিদ।

টেম্পল মাউন্ট ইহুদিদের পবিত্রতম স্থান। বলা হয়, এখানেই আব্রাহাম তাঁর পুত্র আইজ়্যাককে ঈশ্বরের উদ্দেশে বলি দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। এর পর আকাশ থেকে একটি ভেড়া নেমে আসে এবং আইজ়্যাককে মুক্ত করে।

ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী জেরুসালেমের টেম্পল মাউন্ট তৃতীয় পবিত্রতম স্থান। প্রথম দু’টি সৌদি আরবের মক্কা এবং মদিনা।

বাইবেল অনুযায়ী, স্বয়ং যিশুর মূল কর্মকাণ্ড ছিল এই জেরুসালেমে। এখানেই তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয় এবং এখানেই পরে তাঁর পুনরুত্থান ঘটে।

খ্রিস্টান, মুসলিম এবং ইহুদিরা নিজ নিজ ধর্মের যুক্তিতে জেরুজালেমের উপর নিজেদের আধিপত্য দাবি করে থাকে। তা নিয়ে বিতর্ক, বাগ্‌বিতণ্ডা লেগেই আছে পশ্চিম এশিয়ায়।

ওয়েস্টার্ন ওয়ালে ইহুদিদের প্রার্থনা নিষিদ্ধ। ইজ়রায়েল সেই নিষেধ মানে না। তাতে প্যালেস্তাইন ক্ষুব্ধ হয়। প্রায়ই দুই দেশের বিরোধ প্রকট হয় ওয়েস্টার্ন ওয়ালকে কেন্দ্র করে।

জেরুসালেমকে কেন্দ্র করে পশ্চিম এশিয়ার স্থানীয় সমস্যা ক্রমে একটি আন্তর্জাতিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। আমেরিকা, ব্রিটেন থেকে শুরু করে আরব দেশগুলি ইজ়রায়েল-প্যালেস্তাইন দ্বন্দ্বে নাক গলায় হামেশাই।

বহু দেশের হস্তক্ষেপে দিন দিন জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠেছে জেরুসালেমের ভূ-রাজনীতি। এই বিতর্কেই বর্তমানে যুদ্ধ চলছে ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্তেনীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে। যুদ্ধে প্রাণ গিয়েছে কয়েক হাজার মানুষের।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.