জ.ই. মামুন
জন্মদিন নিয়ে আমার বিশেষ কোনো উচ্ছ্বাস নেই, আতিশয্য তো একেবারেই নেই। শিশুকালে জন্মদিনের কেক কাটার চল আমাদের সময়ে ছিলো না, তাই কেক কাটার প্রতিও কোনো আগ্রহ নেই। তবু ভালোবেসে কেউ যখন কেক কাটেন বা কেক নিয়ে হাজির হন, আমি কিছুটা কুণ্ঠিত হই, আবার লজ্জামিশ্রিত কিছুটা খুশিও হই।
আজ আমার জন্মদিন। অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে এই ধরার ধুলায় বেঁচে আছি, মোটামুটি সম্মান নিয়ে টিকে আছি। মাঝে মাঝে জয় গোস্বামীর কবিতার মতো করে ভাবি- এই জীবন নিয়ে আমি কি করেছি এতদিন? সহজ স্বীকারোক্তি- জীবনের সময়গুলো কেবল অপচয় করেছি। চেষ্টা করলে অনেক কিছু না হোক, কিছু না কিছু করতে পারতাম। কিন্তু করিনি। করিনি কারণ আমি অলস, করিনি কারণ আমি ভাবি পরে করবো। সেই পর আর আসে না। জীবন চলে যায কুড়ি কুড়ি বছরের পার!
এই জীবন নিয়ে আমার বিশেষ অভিযোগ- অনুযোগ নেই, আমার জীবনে কোনো উল্লেখযোগ্য ব্যর্থতা নেই। খুব বেশি সাফল্য না থাকলেও জীবনের অর্জন নেহাৎ কমও নয়। একটা খুব সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, অল্পমতি, অল্পজ্ঞানী, খুব মিষ্টভাষীও নই- তবু জীবনে খুব বড় কোনো বিপদে না পড়ে, সুস্থ শরীরে এতগুলো বছর এই কঠিন সমাজে টিকে আছি সেজন্য আমি গভীরভাবে আনন্দিত। আমি সবচেয়ে বেশি আনন্দিত মানুষের ভালোবাসায়। এই জীবনে এত মানুষের এত এত ভালোবাসা পেয়েছি, যার কোনো লেখাযোখা নেই। মাঝে মধ্যে মনে হয়, এত আমার প্রাপ্য ছিলো না তো!
জন্মদিন এলে দেখি মানুষ নানারকম প্রতিজ্ঞা করে, রেজুলেশন করে, আমি কখনো সেরকম কিছু করিনি। শুধু মনে হয়, দেখতে দেখতে আরেকটা বছর চলে গেলো। জীবনের হিসাবের খাতা থেকে আরেকটা বছর কমে গেলো। বয়স ৫০ পার হবার পর থেকেই মনে হয়, সময় তো শেষ হয়ে আসছে, কিছু কাজ করা দরকার। কাজ মানে এমন কাজ, যাতে শুধু টাকা পয়সা উপার্জন, খ্যাতি বা পদ পদবী পুরস্কার না, যাতে মানুষের, দেশের সমাজের, সময়ের, আমার চারদিকের গাছপালা তরুলতার, পশু পাখির উপকার হয় এবং আমারও আনন্দ হয়। সেই কাজটা যে কি আমি এখনো জানি না। তবে এটুকু জানি, যদি বেঁচে থাকি, কিছু একটা করবো, ইনশাল্লাহ। তখন আপনাদের আরো বেশি ভালোবাসা আরো বেশি শুভেচ্ছার দরকার হবে।
নিজের জন্মদিনে সবার মঙ্গল কামনা করছি।