জাতীয় জাদুঘরে ‘রেট্রোস্পেক্টিভ’ শীর্ষক চিত্রকর্মের বিশেষ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে গতকাল স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদের ‘১৯৭৩-২০২৩ আ রেট্রোস্পেক্টিভ’ শীর্ষক নির্বাচিত চিত্রকর্মের বিশেষ প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
জাতীয় জাদুঘরের নলিনী কান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে আয়োজিত মাসব্যাপী একক শিল্প প্রদর্শনীতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের প্রায় ১৪০টি নির্বাচিত শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী ‘রেট্রোস্পেকটিভ’ প্রদর্শনীর উদ্বোধন শেষে চিত্রকর্মগুলো পরিদর্শন করেন।
ক্যানভাসে কোথাও ফুটে উঠেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় মুখ, কোথাও ১৫ আগস্টের শোকগাথা। আছে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালি জাতির জেগে ওঠার নানা দৃশ্য। রং-তুলির ছোঁয়ায় ক্যানভাসে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাসিমাখা মুখও। সব মিলে একেকটি ছবি যেন শিল্পীর জাদুকরী ছোঁয়ায় হয়ে উঠেছে জীবন্ত।
সত্তর দশকের শুরুর দিকে দেশে বিমূর্ত চিত্রকলার যে দুর্বোধ্য পর্বের সূচনা হয়েছিল,তাতে গাঁটছড়া না বেঁধে শিল্পী শাহাবুদ্দিন নির্মাণ করেন এই স্বকীয় শৈলী। রং ও তুলির দ্বৈত ছোঁয়ায় ক্যানভাসে তিনি যেন নির্মাণ করেছেন বাংলাদেশের ইতিহাস এবং এ অঞ্চলের পরিশ্রমী স্বাধীনচেতা মানুষের শরীরী প্রকাশভঙ্গি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছি, আজ আমাদের তরুণ সমাজের মধ্যে সেই চেতনা আবার ফিরে আসতে শুরু করেছে, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় পাওয়া।’
তিনি বলেন, শিল্পীর আঁকা ছবি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করা যায়, আবার সঙ্গে সঙ্গে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়া যায়, একটা চেতনা জাগ্রত হয়। আর আমাদের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই চেতনায় বাংলাদেশের জনগণ জাগ্রত হবে, দেশকে মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে গড়ে তুলবে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্টের পর নির্বাসিত সময়ে বিচার চাওয়ার অধিকারও আমাদের ছিল না। রিফিউজি হিসেবে ছিলাম। বাবা-মা-ভাইয়ের হত্যার বিচার পাওয়ার অধিকার আমাদের ছিল না। কারণ খুনিদের রক্ষায় ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছিল। বিচার পাওয়ার অধিকারটুকুও কেড়ে নেয়া হয়েছিল। তদন্ত কমিশনকে তখন জিয়াউর রহমান দেশে আসতে দেয়নি।
তিনি বলেন, আমরা বাঙালি, জাতির পিতা আমাদের একটি স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন। শিল্পী শাহাবুদ্দিন একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার তুলিতে উঠে আসে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।
শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি প্যারিসে বাস করেন কিন্তু তার হৃদয় থাকে বাংলাদেশে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে স্মৃতিচারণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে ‘শাহাবুদ্দিন, আ রেট্রোস্পেক্টিভ ১৯৭৩-২০২৩’ শিরোনামের একটি বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন।