জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ‘৯৯৯’ ক্রমেই মানুষের ভরসার জায়গা হয়ে উঠছে। বিপদে-আপদে সাধারণ মানুষকে আরও দ্রুত সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হচ্ছে জাতীয় এই সেবা ইউনিটকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই কয়েক বছরে জাতীয় সেবা নম্বর মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তবে কিছু বিড়ম্বনা ও প্রতিবন্ধকতাও আছে। সেগুলো দূর করতে নতুন করে সাজানো হচ্ছে পুলিশের এই ইউনিটটিকে।
‘৯৯৯’ নম্বরের প্রতি মানুষের আস্থা যে বাড়ছে, সেটা আরও স্পষ্ট হয় গত বছরের অক্টোবরের দুটি ঘটনায়। একই মাসে কয়েকদিনের ব্যবধানে ঘটনা দুটি ঘটে সাতক্ষীরা ও বরিশালে।
২০ অক্টোবর বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের এআরখান বাজারে চুরি করতে গিয়ে একটি দোকানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন এক চোর। চুরি করা মালামাল গুছিয়ে ব্যাগ ভর্তি করতে তার বেশি সময় লেগেছে। সময় গড়িয়ে সকাল হয়ে গেছে। সকাল হলে লোকজন দোকানের পাশে অবস্থান টের পায় চোর। এ অবস্থায় সেখান থেকে বের হলে, তার রক্ষা হতো না। তার জীবনের ঝুঁকি ভেবে এ সময় নিজেকে উদ্ধার করতে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তা চান তিনি। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ কল সেন্টার থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে চলতি (২০২২) বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ৯৯৯-এ সারা দেশ থেকে মোট ৪ কোটি ২৫ লাখ ১৯ হাজার ৫৬৩টি কল এসেছে। তবে এর মধ্যে কোনও কারণ ছাড়াই ‘অহেতুক কল’ এসেছে ২ কোটি ৫০ লাখ ৮৫ হাজার ৯০টি। আর যারা সত্যিকার অর্থে সেবা পাওয়ার জন্য ফোন করেছেন তাদের মধ্যে সার্ভিস দেওয়া সম্ভব হয়েছে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৩৪ হাজার ৪৭৩ জনকে। এসব কলের মধ্যে মিসকল দিয়েছে ৪৩ লাখ ৬ হাজার ৮৫টি। ব্লাংক কল ১ কোটি ৮৪ লাখ ৯০ হাজার ৩০৯টি।
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নাইনে জরুরি প্রয়োজনে সেবা পেতে আসা কলগুলোর মধ্যে পুলিশি সহায়তা পেতে কল এসেছে ৮ লাখ ৩৬ হাজার ৭০৩টি। এছাড়াও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৯১ হাজার ১০৮টি ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের জন্য ১ লাখ ৭ হাজার ৫৮২টি কল আসে।
৯৯৯ এর কলারদের মধ্যে ৭৩ লাখ ২২ হাজার ৪৮৭ জন পুরুষ, ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩৬৭ জন শিশু এবং ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯২৮ জন নারী। তাছাড়া সেবা নিতে ডিপার্টমেন্টাল কল এসেছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৩৩৯টি।
নতুন বছরে এই জরুরি সেবা ইউনিটটিকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে উল্লেখ করে সংস্থাটির প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি তাবারাক উল্লাহ বলেন, ‘নতুন বছরে নতুনভাবে আমাদের পদচারণা বাড়বে। অতীতেও ৯৯৯ সেভাবে কাজ করে আসছে। একটি সুসংবাদ হচ্ছে, চলতি মাসেই আমরা ৯৯৯-কে নতুন কাজের উপযোগী হিসেবে দাঁড় করাচ্ছি।’
নতুন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এতদিন বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেবা নিতে ফোন দিলে আমরা প্রথমেই কলারের ঠিকানা সম্পর্কে জানতে চাইতাম। এতে করে সময় অপচয় হতো। যে ব্যক্তি সাহায্য চাইছেন ওনার হয়তো তাৎক্ষণিক সাহায্য প্রয়োজন। অথচ তখন কিছুটা সময় সেখানে ব্যয় হয়। ফলে প্রতিটি কলের দ্রুত রেসপন্স করার জন্য এখন থেকে কল করার সঙ্গে সঙ্গে সেই ব্যক্তির আইডেন্টিফিকেশ, লোকেশন এবং অবস্থান ৯৯৯ নাইনে চলে আসবে।’