The news is by your side.

জঙ্গিদের ইসলাম  সত্যিকারের ইসলাম নয়

0 133

তসলিমা নাসরিন

ঢাকার হোলি আর্টিসান ক্যাফেতে ইসলামি সন্ত্রাসীদের হামলার ওপর ভিত্তিকরে ‘ ফারাজ’ নামে একখানা ফিল্ম বানানো হয়েছে ভারতে। ছবিটি এখন নেটফ্লিক্সে চলছে।  ছবির শুরুতে নদী নৌকা,   ট্রাফিক জ্যাম, ভিড়ের  রেলগাড়ি,  বাচ্চাদের ক্রিকেট — এসব দেখিয়ে  ঢাকাকে  পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। দৃশ্যগুলো দেখে ভেবেছিলাম ছবিটি খুব উঁচু মানের হবে।

কিন্তু আশ্চর্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ধনী পরিবারের ছেলেগুলো  কী করে    সন্ত্রাসী হলো, ঠান্ডা মাথার খুনী হলো, কী পদ্ধতিতে কারা  তাদের মগজ ধোলাই করেছে সে গল্প বলা হয়নি। ক্যাফেতে কী কারণে তারা গেছে, কাদের হত্যা করতে গেছে, সেসবও  বলা হয়নি । ভিকটিমদের যে জবাই করা হয়েছিল, সে দৃশ্য দেখানো হয়নি। ফারাজ নামে এক ছেলেকে হিরো বানানো কেন হয়েছে, সে কী করেছিল ক্যাফের ভেতর, কেউ কি   সাক্ষ্য দিয়েছে?

এই প্রশ্নের কিন্তু কোনও উত্তর নেই। জঙ্গিদের সকলকে মেরেছে পুলিশ, অথচ এনকাউণ্টার দেখানো হয়নি। তাদের আল্লাহু আকবর চিৎকার দেখানো হয়নি। তাহমিদ যে সন্ত্রাসীদের দলের লোক, তা লুকোনো হয়েছে।  জঙ্গিরা যে শর্টকাটে বেহেস্তে যাওয়ার নীল নকশা পেয়েছিল, বেহেস্তের ৭২ হরের সঙ্গে অনন্তকাল সঙ্গমরত অবস্থায় থাকতে পারার লালসা তাদের যে  মনস্টার বানিয়েছিল, তার কোনও গল্প নেই। আমার মনে হয় যে কথাটি বলার জন্য গোটা ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে, তা হলো   জঙ্গিদের ইসলাম  সত্যিকারের ইসলাম নয়। এ নিয়ে কিন্তু ভিন্নমত আছে। অথচ  বিতর্কের সুযোগ নেই ।

ইসলামের ইতিহাস কিন্তু  বলে ওদের ইসলামই সত্যিকারের ইসলাম। কাফেরদের হত্যা করার কথা ইসলামের নানা গ্রন্থে লেখা। জঙ্গিরা ইসলামের সেই গুরু দায়িত্বটিই পালন করতে হোলি আর্টিসান ক্যাফেতে গিয়েছিল, যেহেতু ক্যাফেতে বিদেশি অমুসলিম লোকেরা বেশি যাতায়াত করে। কাফেরদের হত্যা করার কথা যে ইসলাম বলে তা  অস্বীকার করে মুসলমানের লাভ কিছু হবে না। অস্বীকার না করে বরং সত্যকে  স্বীকার করুক তারা। স্বীকার করুক,   গ্রন্থে যা লেখা তা অমানবিক। বলুক  অমানবিক উপদেশ আমরা মানবো না, আমরা উদারতা আর মানবতার চর্চা করবো, আমরা গ্রন্থের উর্ধে উঠবো।

এখন যদি শিল্প সাহিত্য চলচ্চিত্র   সত্যিকার ইসলামের মুখে মুখোশ পরিয়ে বলে  ইসলাম  ঠিক এই মুখোশের মতো পবিত্র, ইসলাম  ঠিক এই মুখোশের মতো নিরীহ এবং সরল, তাহলে অন্ধের চোখ ফাঁকি দেওয়া যায়, যারা চোখে ভালো দেখে তারা কিন্তু বুঝে ফেলে এ মুখ নয়, এ মুখোশ।

ছবিটি দেখার পর মনে হয়েছে, ফারাজের ফ্যামিলির লোকেরা বোধহয় প্রচুর  টাকা পয়সা খরচ করে এই ছবিটি দেশে সম্ভব নয় বলে বিদেশের মাটিতে যে করেই হোক বানিয়েছেন। ফারাজকে হারিয়ে যে কষ্ট  তাঁরা পাচ্ছেন, সেই  কষ্টের ওপর এই  ফিল্ম  অনেকটা মলমের মতো কাজ করছে হয়তো। কিন্তু বাকি ২৭ জন নিরপরাধ ব্যক্তির ফ্যামিলির কষ্ট  কী করে দূর হবে?

 

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.