গণভবনে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে এ ঘটনা ঘটেছে। বৈঠকে অংশ নেওয়া মনোনয়ন বোর্ডের কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্য জানান, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ তাঁর বড় ছেলে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে আবারও দলের মনোনয়ন না দেওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি তাঁর ছেলেকে মনোনয়ন দেওয়ার পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি দেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন।
সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য বারবার অনুরোধ করেন আবুল হাসানাত। এক পর্যায়ে তাঁর মান-অভিমানের বিষয়টিও বৈঠকে প্রকাশ পায়। তিনি বিসিসিতে দলের প্রার্থী পরিবর্তন করা হলে তাঁর বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান নড়বড়ে হওয়ার কথাও বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের মতামত চাইলে সবাই আবুল হাসানাতের ছোট ভাই আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দেওয়ার পক্ষে মত দেন।
তখনই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন আবুল হাসানাত। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবশ্য ওই সময়ে তাঁর প্রেশার এবং ডায়াবেটিস স্বাভাবিক ছিল। পরে তিনি আবারও বৈঠকে অংশ নেন। তিনি দলের মনোনয়ন বোর্ডের একজন প্রভাবশালী সদস্য। এর আগে আবুল হাসানাত মেয়র পদে তাঁর ছেলেকে মনোনয়ন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-১ আসনে খোকন সেরনিয়াবাতকে দলের মনোনয়ন দেওয়ার অনুরোধ জানান।
তাঁকে জানানো হয়, মেয়র পদে খোকন সেরনিয়াবাতই দলের প্রার্থী। আর বরিশাল-১ আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আবুল হাসানাত নিজেই বরিশাল-১ আসনের এমপি। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের এক নম্বর সদস্য এবং বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তাঁর ছেলে সাদিক আবদুল্লাহ বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
বিদ্রোহের আশঙ্কা গাজীপুর ও সিলেটে
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান এর আগে দলের মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচিত হতে পারেননি। তাঁর পরাজয়ের জন্য দলের দ্বন্দ্ব-বিবাদকেই মূলত দায়ী করা হয়েছিল। এবারও একই ধরনের চিত্র। দলের মেয়র প্রার্থীর নাম ঘোষণার পরপরই গৃহদাহের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীর অনেকেরই আশঙ্কা, গাজীপুরের বহিষ্কৃত মেয়র ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারেন।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়েও বিরোধিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজসহ মনোনয়নবঞ্চিত ১০ নেতার অনেকেই দলের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না। তাঁরা আগে থেকেই আনোয়ারুজ্জামানের বিরোধিতা করে আসছেন।
নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন কিনা– জানতে চাইলে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেছেন, ‘মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার অনেক সময় রয়েছে। এর মধ্যে সার্বিক পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেটাই বিবেচ্য বিষয়। তবে নির্বাচনে অংশ নিলে আমি জয় পাব। এটা নিশ্চিত।’
প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেছেন গাজীপুরের বহিষ্কৃত মেয়র জাহাঙ্গীর। অবশ্য এ দুই নেতাই দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
সম্ভাব্য বিদ্রোহী প্রার্থী প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগের দলীয় কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, বিদ্রোহের কোনো সুযোগ নেই। দলের সিদ্ধান্ত না মানলে শাস্তি পেতেই হবে। সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেছেন, বিদ্রোহ হবে না। আর বিদ্রোহ হলে একটাই শাস্তি, সংগঠন থেকে বহিষ্কার।