সুজন হালদার
১৫ আগস্ট ১৯৭৫। সকালের সবটুকু আলো মিলিয়ে যায় জমার অন্ধকারে। শূন্যতা, গভীর শূন্যতার কালো মেঘে বাংলার আকাশ ভারি হয়ে ওঠে। পিতা নেই, শিশুপুত্র রাসেলসহ পরিবারের কেউ বেঁচে নেই!
জামাট অশ্রু আর সাড়ে সাত কোটি বাঙালির আর্তচিৎকারে ভারী হয়ে ওঠে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের মানচিত্রজুড়ে বাংলার আকাশ বাতাস। নিমিষেই স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা জাতি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি ঘাতকরা। বুলেটের আঘাতে রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত করে নির্মমভাবে হত্যা করে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শেখ আবু নাসের, শেখ কামাল, বেগম সুলতানা কামাল, শেখ জামাল, বেগম পারভীন জামাল, শেখ রাসেল, কর্নেল জামিল, রিন্টু, শেখ ফজলুল হক মনি, বেগম আরজু মনি, আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, বেবী সেরনিয়াবাত, আরিফ সেরনিয়াবাত, বাবু সেরনিয়াবাত, শহীদ সেরনিয়াবাত, লক্ষ্মীর মা, পোটকাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য এবং নিকটাত্মীয়দের।
বঙ্গবন্ধুর মৃতদেহ টুংগীপাড়ায় সমাহিত করা হলেও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
রাষ্ট্রীয় কিংবা ধর্মীয় কোন রীতি নীতি না মেনে- অনেকটা তাচ্ছিল্যের সঙ্গে তাদের দাফন সম্পন্ন করা হয়, দ্রুততম সময়ে। আওয়ামী লীগের কোন কর্মী কিংবা সাধারণ মানুষ; সকলের জন্য কবরস্থানে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে জিয়াউর রহমান সরকার।
আওয়ামী লীগ কর্মীরা কবরস্থানটি সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও, জিয়াউর রহমানের অনুসারী ঘাতকচক্র বারবার বাধা দেয়। সব বাধা উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ কর্মীরা প্রথমে ইট পাথর দিয়ে কবরস্থান সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও তা বারবার ভেঙে ফেলা হয়।
১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশে আসার পর কবরস্থানটি সুরক্ষারউদ্যোগ নেয়া হয়, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।
পিতার পবিত্র রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে নেয় ঘাতকচক্র। মোশতাক, জিয়া কেড়ে নেয়- বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া বাংলাদেশের সবটুকু সম্ভাবনা। বঙ্গবন্ধু বিহীন বাংলাদেশ পরিচালিত হয় পাকিস্তানি ভাবধারায়।
সেনা শাসক জিয়াউর রহমান অস্ত্রের মুখে কেড়ে নেয় মানুষের সবটুকু স্বাধীনতা। মুখ থুবরে পড়ে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার। ভূলুণ্ঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
একাত্তরের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসিত করা হয় রাজনীতিতে। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়। মাত্র সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার যে মিছিলে করেন, জিয়াউর রহমান জাতির সেই স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে দেন।
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে যে সকল বন্ধু দেশ বাংলাদেশে প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল, তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। জিয়াউর রহমানের সেনাশাসন আর এরশাদের স্বৈরশাসনে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির পিতার আদর্শে ফিরে আসতে জাতিকে অপেক্ষা করতে হয় দুই দশকেরও বেশি সময়। বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতি আবার শামিল হয় গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায়। জাতির পিতার স্বপ্নে গড়া বাংলাদেশ ফের এগিয়ে চলে উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায়।