মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন স্বীকার করেছে, তাদের নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের সামনে রাশিয়া এবং চীন ভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। রাশিয়া ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য তাৎক্ষণিক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং ইউক্রেনে হামলার মধ্য দিয়ে দেশটি প্রকারান্তরে সেই মুক্ত ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই আগ্রাসনমূলক নৃশংস যুদ্ধ শুরু করেছে। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে চীন আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, সামরিক এবং প্রযুক্তিগত শক্তির দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
পেন্টাগন ঠিক এই কারণে চীনকে তার ‘প্রধান চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং স্পষ্টতই তাঁর ক্ষমতাকে সুসংহত করতে এবং তঁার আদর্শিক ও জাতীয়তাবাদী উদ্দেশ্য প্রচার করতে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) ২০তম কংগ্রেসকে ব্যবহার করেছেন। এ কারণে আমেরিকাকে নতুন করে চীন কৌশল নিয়ে পর্যালোচনা করতে হচ্ছে।
কিছু সমালোচক আজকের পরিস্থিতিকে এই প্রমাণ হিসেবে দেখতে চান যে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং জর্জ ডব্লিউ বুশ দুজনই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) চীনকে জায়গা দেওয়ার বিষয়টিকে অকপটভাবে নিয়ে যে চীন নীতি ঠিক করেছিলেন, তা ভুল ছিল। অবশ্য দুই দশক আগে চীন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের যে অত্যধিক আশাবাদ ছিল, তাকে নির্বুদ্ধিতা হিসেবে দেখা ঠিক হবে না।
স্নায়ুযুদ্ধের পর পূর্ব এশিয়ার তিন প্রধান শক্তি ছিল যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং চীন। প্রাথমিক বাস্তববাদী বিবেচনা বলে, যুক্তরাষ্ট্রের তখন জাপানকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী একটি পুরোনো ভগ্নাংশ না ভেবে তার সঙ্গে মৈত্রী পুনরুজ্জীবিত করা উচিত ছিল। ২০০১ সালে চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় সদস্য হওয়ার অনেক আগে, ক্লিনটন প্রশাসন মার্কিন-জাপান জোটকে আবার গড়ে তোলা নিশ্চিত করেছিল, যা বাইডেনের কৌশলের ভিত্তি হিসেবে রয়ে গেছে।
দায়িত্ব নেওয়ার আগে বাইডেন প্রশাসনের নতুন কৌশল নির্ধারণের সঙ্গে যুক্ত দুজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা লিখেছিলেন, ‘চীনের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার ধারণার মূল ভুলটি ছিল এটি অনুমান করা যে এই সংযুক্তি চীনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা, অর্থনীতি এবং বৈদেশিক নীতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনতে পারে।’ তাঁরা উপসংহার টেনেছেন এই বলে যে যুক্তরাষ্ট্রের বাস্তবসম্মত লক্ষ্য হলো, মার্কিন স্বার্থ এবং মূল্যবোধের অনুকূল শর্তে চীনের সঙ্গে সহাবস্থানের একটি স্থির অবস্থার সন্ধান করা।’
যুক্তরাষ্ট্রের নীতিটি ছিল ‘চীনকে যুক্ত করো, তবে ঘেরাও করে রেখে’; অর্থাৎ চীনকে বৈশ্বিক অগ্রগতির ধারায় যুক্ত করতে হবে কিন্তু তার সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ দূরত্বও বজায় রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র আগে প্রত্যাশা করেছিল, সি চিন পিং যুগের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেশটিতে গণতন্ত্র আনতে না পারলেও বৃহত্তর উদারীকরণের আবহ তৈরি করবে। কিন্তু সি চিন পিং সে প্রত্যাশা ভেঙে দিয়েছেন। অল্প কিছু সময়ের জন্য চীন তার ভূখণ্ডে বিদেশিদের ভ্রমণে বৃহত্তর স্বাধীনতা দিয়েছিল, বিদেশি যোগাযোগ আগের চেয়ে বাড়িয়েছিল, সংবাদপত্রে বিস্তৃত মতামত প্রকাশ করতে দিয়েছিল এবং মানবাধিকারের প্রতি নিবেদিত কিছু এনজিওকে বিকশিত হতেও দিয়েছিল। কিন্তু তার সবকিছুই এখন ছেঁটে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
যেহেতু সি চিন পিং তাঁর নতুন মেয়াদ নিশ্চিত করে অধিকতর রক্ষণশীলভাবে এগোচ্ছেন, সেহেতু যুক্তরাষ্ট্রকে আরও সতর্কভাবে চীন নীতি তৈরি করতে হচ্ছে।