The news is by your side.

চলতি বছরেই চালুহচ্ছে ঢাকা-কক্সবাজার রেল চলাচল

0 119

 

দেশের সর্বদক্ষিণের জেলা কক্সবাজার। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতসহ পর্যটন নগরী কক্সবাজারে সড়ক, নৌ, বিমানপথে যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকলেও এতদিন রেলপথে কোনো যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল না। তবে বর্তমান সরকার পর্যটন নগরীকে রেলওয়ে যোগাযোগের আওতায় নিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে ২০১০ সালে প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। এর মাধ্যমে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল যোগাযোগ চালু হবে। প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলতি বছরেই চালু হবে ঢাকা-কক্সবাজার রেল চলাচল। আর এর মাধ্যমেই খুলতে যাচ্ছে রেলের দক্ষিণের দুয়ার। এতে কক্সবাজারের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যেমন যোগ হবে, আবার ট্রেনে বসেই যাত্রীরা শুনতে পারবে সমুদ্রের উত্তাল গর্জন।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে ট্রেনের প্রথম ট্রায়াল হতে পারে। সড়কপথে ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসতে যেখানে সময় লাগে প্রায় সাড়ে ১১ ঘণ্টা, ট্রেনে আসতে সেখানে লাগবে মাত্র সাড়ে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। কমে আসবে পরিবহন ব্যয়ও। ঢাকা থেকে এসি বাসে যেখানে দুই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হয়, সেখানে ট্রেনের এসি চেয়ারে বসে কক্সবাজার আসতে লাগবে মাত্র এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। নন-এসি চেয়ার কোচে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ হতে পারে। প্রাথমিকভাবে দুই জোড়া ট্রেন চলবে এই রুটে। পরে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। ঢাকা থেকে যেসব ট্রেন এখন চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসে, সেইসব ট্রেনের শেষ গন্তব্য হবে কক্সবাজার। এছাড়া সম্পূর্ণ নতুন একটি ট্রেন চালু হবে এই রুটে। তবে এখনো ট্রেনের নাম নির্ধারণ করা হয়নি।

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ২০১০ সালে এই কাজ শুরু হয়, শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে। প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩১ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হচ্ছে। এই পথে রেলস্টেশন থাকছে ৯টি।

এর ফলে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডোরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হবে। পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কক্সবাজার সদরের ঝিলংজায় ২০ একর জায়গায় নির্মিত হচ্ছে ঝিনুকের আদলে দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশন। শতাধিক শ্রমিক-কর্মকর্তা এখন পুরো রেলস্টেশনজুড়ে করছেন নানা ধরনের কাজ। স্টেশনের প্রবেশমুখে একপাশে গাড়ি রাখার স্থান প্রস্তুতসহ নানা অবকাঠামোর কাজ চলছে। স্টেশনের তিনটি প্ল্যাটফর্মে ছয়টি রেললাইনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলছে স্টেশনের মূল ভবনের কাজও। ছয়তলা ভবনের নিচ তলায় যাত্রীদের টিকিট কাটার ব্যবস্থা থাকবে, অন্য তলায় থাকবে যাত্রীদের জন্য নানা সুবিধা। এছাড়া ক্যান্টিন, হোটেল, মার্কেটসহ ৫ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতার কনভেনশন সেন্টার থাকবে কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে।

পর্যটকরা যেন স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটা করতে পারেন সেজন্য মার্কেট স্থাপন করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা কক্সবাজারসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র ভ্রমণে এসে ঘোরাঘুরি শেষে দিনে দিনেই ফিরতে চাইলে নিজেদের জিনিসপত্র যেন রাখতে পারে সেই ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে থাকবে পাঁচ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতার কনভেনশন সেন্টার। সেখানে কক্সবাজারসহ যেকোনো এলাকার মানুষ কনফারেন্স বা যেকোনো অনুষ্ঠান করতে পারবে।

এরই মধ্যে আইকনিক স্টেশনের ৮০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজও চলছে পুরোদমে। নান্দনিক সৌন্দর্যের এই স্টেশনে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন মো. রাসেল মিয়া। তিনি বলেন, গত কয়েক মাস ধরে টানা কাজ করছি। খুব দ্রুত কাজ চলছে। স্টেশনের কাজ শেষ হলে পর্যটকদের বেশ আকৃষ্ট করবে।

চলতি বছরেই ঢাকা থেকে কক্সবাজারে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। এর মধ্যদিয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের জন্য তৈরি হবে নতুন মাত্রা। সড়ক পথের দীর্ঘ যাত্রার ভোগান্তি ছাড়াই পর্যটকরা এখন সহজেই ছুঁয়ে দেখতে পারবেন সমুদ্রের নীলজল।

Leave A Reply

Your email address will not be published.