পাহাড় থেকে নামার সিঁড়ি ভেঙে দুজন মারা গেছেন, গতকাল শনিবার মধ্যরাতে এমন কথা ছড়িয়ে পড়লে পুণ্যার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর পাহাড়ে ওঠা–নামার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভোরের আলো ফোটার পর বিকল্প পথে নামতে অনুমতি দেয় কর্তৃপক্ষ। এ সময় হুড়োহুড়ি আর ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে গিয়ে আহত হন পাঁচজন। এ ছাড়া মানুষের চাপাচাপিতে ২৪ ঘণ্টায় অসুস্থ হয়েছেন অন্তত ২ হাজার ২০০ তীর্থযাত্রী।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ২০০ ফুট ওপরে পাহাড়ের চূড়ায় থাকা চন্দ্রনাথ ধামকে ঘিরে গত শুক্রবার থেকে সীতাকুণ্ডে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় তীর্থ শুরু হয়। এ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অন্তত ১০ লাখের বেশি পুণ্যার্থীর সমাগম হয়। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন ভারতসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পুণ্যার্থীরা।
মেলা কমিটির অতিরিক্ত সম্পাদক দুলাল দে বলেন, কোথাও সিঁড়ি ভাঙার খবর তাঁদের কাছে নেই। রাত আড়াইটার দিকে স্বয়ম্ভুনাথ মন্দিরের ঢোকা বন্ধ করে দেওয়ার পর জটলা অসহনীয় হয়ে পড়ে। ফলে ওঠানামা বন্ধ হয়ে যায়। ভোরে বিকল্প পথে তীর্থযাত্রীদের নামানোর কাজ করছেন তাঁরা। এ ছাড়া ঠেলাঠেলিতে ওঠার পথে কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আজ সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে মুঠোফোনে এক পুণ্যার্থী বলেন, রাত তিনটার দিকে চন্দ্রনাথ ধাম পরিক্রমা শেষে খাড়া সিঁড়ি বেয়ে কিছু দূর নেমেছিলেন তিনি। এরপর তাঁরা শুনতে পান, নামার পথের ৪০০ ফুট নিচে দুটি সিঁড়ি ভেঙে খাদে পড়ে দুই তীর্থযাত্রী নিহত হয়েছেন। এরপর ওই পথে নামা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ওপরের মানুষের চাপের কারণে ওপরের দিকেও উঠতে পারছিলেন না তাঁরা। ফলে সারা রাত একটি সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনিসহ পাঁচ আত্মীয়। ভোরে ইকোপার্কের রাস্তা (বিকল্প পথ) দিয়ে চলাচল উন্মুক্ত করার পর উল্টো পাহাড়ে উঠে বিকল্প পথ ধরে নামতে শুরু করেন। এর আগে রাত নয়টার দিকে সমতল থেকে পাহাড়ের চূড়ায় থাকা চন্দ্রনাথ ধামের দিকে রওনা দেন তাঁরা। ৩০০ ফুট পথ পাড়ি দিতে রাত সাড়ে ১২টা বেজে যায়।
এ দিকে পাহাড়ে মানুষের চাপ কমাতে রাত আড়াইটার পর পাহাড়ের ৪০০ ফুট ওপরে থাকা পানিঘাটা এলাকায় ওঠার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভোররাতে মানুষের জটলায় ওপর থেকে নিচের দিকে চাপের ঢেউ লাগে। এতে পড়ে গিয়ে ৫ পুণ্যার্থী গুরুতর আহত হন। আহত ব্যক্তিরা হলেন বীনা দাস (৫০), লিপি কর্মকার (৩২) কমলা কর্মকার (৪০), সুশেন দাস (৩০) ও চম্পা হাওলাদার (৪৪)।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, পাঁচ-ছয়জন গুরুতর আহত পুণ্যার্থীকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। এ ছাড়া মেলা এলাকায় তাঁদের অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পে গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজার ৭০০ জন। তাঁদের বিনা মূল্যে ওষুধ দেওয়া হয়েছে।
মেলা এলাকায় বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, জন্মাষ্টমী পরিষদ, হিন্দু মহাজোটসহ কয়েকটি সংস্থা। তারাও ৫০০ রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছে বলে জানা গেছে।