গাজায় গণহত্যা বন্ধ করতে ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ আগামী সপ্তাহে বৈঠকে বসবে। শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি এই ঘোষণা দেন।
আলজেরিয়া বুধবারের বৈঠক আহ্বান করেছিল। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এটি ‘ইসরায়েলি দখলদারিত্বের ওপর আরোপিত অস্থায়ী ব্যবস্থার বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের ঘোষণার বাধ্যতামূলক প্রভাব ফেলবে।’
শুক্রবার আইসিজে বলেছে, ইসরায়েলকে অবশ্যই হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে গণহত্যা বন্ধ করতে হবে এবং গাজায় মানবিক সাহায্যে প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে। তবে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়নি।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর বলেছেন, ‘সিদ্ধান্তটি ‘স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, তারা যা চাইছেন, তা করার জন্য আগে যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।’
তিনি ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ‘সম্ভাব্য গোলযোগের জন্য প্রস্তুত থাকুন। কারণ, আলজেরিয়া নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে আরব গ্রুপের পক্ষে প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে যুদ্ধ বন্ধের জন্য চাপ দেবে।’
ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে বিভক্ত নিরাপত্তা পরিষদ ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর সর্বশেষ শুধুমাত্র দু’টি প্রস্তাবে সম্মত হয়।
ডিসেম্বরে যখন ইসরায়েলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিল, তখন নিরাপত্তা পরিষদ গাজার অবরুদ্ধ জনসংখ্যার জন্য বিপুল পরিমাণ সাহায্য পাঠানোর দাবি করেছিল।
হামাসের নজিরবিহীন হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১ হাজার ১৪০ জন মারা গেছেন। যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। এ সময় হামাস প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে। ইসরায়েল দাবি করেছে, এখনও তাদের প্রায় ১৩২ জন গাজায় আটক রয়েছেন। কমপক্ষে ২৮ জন জিম্মিকে হামাস হত্যা করেছে।
হামাসকে দমন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইসরায়েল অভিযান শুরু করলে গাজার ২৬ হাজার ৮৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, এদের প্রায় ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু।
গতকাল শুক্রবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) প্রধান কার্যালয়ে ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা বন্ধে ইসরায়েলকে নির্দেশ দেন। তবে গাজায় ইসরালের সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেননি আদালত। অন্তবর্তীকালীন রায়ে আইসিজের প্রেসিডেন্ট মার্কিন বিচারক জে দোঙ্গু বলেন, গাজায় গণহত্যা ঠেকাতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইসরায়েলকে নির্দেশ দিচ্ছেন আদালত। একই সঙ্গে দেশটিকে গাজায় মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়নে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়াও গাজা উপত্যকায় পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে দিতে ও গাজার সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে ইসরায়েলকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
প্রায় চার মাস ধরে চলা যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধে ইসরায়েলকে ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশন মেনে সবকিছু করার পরামর্শ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক আদালত।