নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে বন্দুকধারীর হামলায় এখনো পর্যন্ত চারজন বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন বলে সেখানে বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন। তাদের তথ্য অনুযায়ী নিহতরা হলেন— ড.আবদুস সামাদ, হুসনে আরা পারভীন, মোজাম্মেল এবং ওমর ফারুক।
সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষিপাশা ইউনিয়নের, জাঙ্গাঁলহাটা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন হোসনে আরা ফরিদ।
হোসনে আরা ফরিদ
বয়স ৪৫ বছরের মতো, বলছিলেন তার ভাগ্নে দেলোয়ার হোসেন।
তবে তারা একই সাথে বড় হয়েছেন কারণ বয়স তাদের কাছাকাছি।
দেলোয়ার হোসেন বলছিলেন, ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশে ছিলেন।
সেবছর বিয়ের পরই তিনি স্বামীর সাথে নিউজিল্যান্ডে চলে যান। এরপর থেকে সেখানেই থাকতেন।
স্বামী ফরিদউদ্দিন বেশ কয়েক বছর আগে একটি দুর্ঘটনায় দুই পা হারিয়েছেন।
এরপর থেকেই তিনি হুইলচেয়ার ব্যবহার করেন। হামলার সময় তারা দুজনেই আল-নুর মসজিদে ছিলেন।
নিউজিল্যান্ডেই তাদের একটি মেয়ে হয়েছে। যার বয়স এখন ১৪ বছর।
দেলোয়ার হোসেন বলছেন, “আমাদের এক মামি নিউজিল্যান্ডে থাকেন। তার কাছে খবরটি শোনার পর হাত পা অবশ হয়ে গিয়েছিলো। এটা কি শুনলাম? এই ধরনের কিছু শোনার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলাম না।”
তিনি বলছেন, কিছুদিনের মধ্যেই তাদের দেশে বেড়াতে আসার কথা ছিল।
দেলোয়ার হোসেন বলছেন, “উনি আমার থেকে দুই বছর বড় ছিলেন। ওনার সাথে আমার চমৎকার একটা সম্পর্ক ছিল। খুবই হাস্যজ্জল আর দিলখোলা মানুষ ছিলেন।”
ড. আবদুস সামাদ
ক্রাইস্টচার্চে লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্বের একজন শিক্ষক ছিলেন ড. আবদুস সামাদ।
এর আগে ড. সামাদ বাংলাদেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিষয়ে শিক্ষকতা করতেন।
যে মসজিদে তার মৃত্যু হয়েছে সেখানে তিনি মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করতেন।
বাংলাদেশে তার বাড়ি ছিল কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার মধুরহাইল্লা গ্রামে।
তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন বন্ধু, প্রতিবেশী এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব। তিনি জানান ড. সামাদ ছয় বছর আগে অগ্রিম অবসর নিয়ে তিনি ক্রাইস্টচার্চ চলে যান।
সেখানেও শিক্ষকতা করতেন। তাকে বন্ধুদের মধ্যে খুব প্রিয় এবং মেধাবী একজন শিক্ষক হিসেবে উল্লেখ করলেন ড. ওয়াহাব।
তিনি বলছিলেন, “আমরা ১৯৮০ সাল থেকে তিন বছর পাশাপাশি বাস করেছি। কিন্তু বন্ধুত্ব তার এক বছর আগে থেকে।”
ড. সামাদ আশির দশকের মাঝামাঝি সময় লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে গিয়েছিলেন।
সেসময় থেকেই দেশটির প্রতি তার আগ্রহ। তার দুই সন্তানের জন্ম সেখানে। তাই জন্মসূত্রে তারা সেখানকার নাগরিকও।
সেকারণেই দেশটিকে তিনি বসবাসের জন্য বেছে নিয়েছিলেন। দুই ছেলেকে নিয়ে সেখানে থাকতেন। আর এক ছেলে ঢাকায় থাকেন।
অধ্যাপক ওয়াহাব বলছেন, “যখন ক্রাইস্টচার্চের এই খবর পেলাম তাৎক্ষণিক ওর কথাই আমার মনে হয়েছিলো কারণ আমি জানি সে খুব নামাজি মানুষ, মাঝে মাঝে ইমামতি করেন।”
“ভেবেছিলাম ওর কিছু হল কিনা। আমার পরিবারের সাথে বিষয়টা আলাপও করছিলাম। ওই দিনই টেলিভিশনে খবর দেখাল আমার এক ভাইয়ের ছেলে। আমার আশংকাই নিশ্চিত হল।”
ডা: মোজাম্মেল হক
চারজনের মধ্যে নতুন যে আরও দুটো নাম এসেছে তার মধ্যে রয়েছে ডা: মোজাম্মেল হকের নাম।
বাংলাদেশ দূতাবাসের অনারারি কনসাল শফিকুর রহমান ভুঁইয়া জানিয়েছেন, তিনি ঢাকার কাছে নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা ছিলেন।
বাংলাদেশে একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে দাঁতের ডাক্তারি পাশ করেছেন।
এরপর ডেন্টিস্ট্রির উদ্ধতর প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলেন ক্রাইস্টচার্চ।
কোথাও প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন কিনা সেবিষয়ে বিস্তারিত তথ্য বা অন্য কোন তথ্য দিতে পারেননি তিনি।
ওমর ফারুক
সর্বশেষ জানা গেছে ওমর ফারুক নামে আর এক ব্যক্তির নাম।
তারা বাড়ি গাজীপুর এতটুকু তথ্যই শুধু পাওয়া গেছে।