জাতিসংঘ স্বীকৃত প্রায় সব দেশ ভ্রমণ শেষ, বাকি ছিল শুধু একটি। এই সময় মার্কিন নাগরিক র্যান্ডি উইলিয়ামস সিদ্ধান্ত নিলেন, নিজেই এবার নতুন একটি দেশ তৈরি করবেন। যেই ভাবনা, সেই কাজ। ক্যালিফোর্নিয়ার মরুভূমিতে ১১ দশমিক শূন্য ৭ একরের খালি জমি কিনে ফেললেন। এরপর সেটিকে ঘোষণা দিলেন ‘দেশ’ হিসেবে।
পেশায় রেডিও সম্প্রচারক উইলিয়ামস কাজ না থাকলেই ভ্রমণে বের হন। তিনি নিজের নবগঠিত দেশের নাম রেখেছেন ‘স্লোজামাস্তান’। তাঁর রেডিও শোর নামানুসারে নামটি রাখা হয়েছে। আর উইলিয়ামস নিজেকে ঘোষণা করেছেন স্লোজামাস্তানের ‘সুলতান’ হিসেবে। খবর সিএনএনের
নতুন দেশ ঘোষণার দৃশ্য ছিল অদ্ভুত নাটকীয়। সেদিন ছিল ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর। উইলিয়ামসের চোখে সানগ্লাস, গায়ে সবচেয়ে ভালো স্যুট। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘দ্য রিপাবলিক অব স্লোজামাস্তান’-এর স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই বিচ্ছিন্নতার ঘোষণাটি মরুভূমিতে খোলা আকাশের নিচে বসানো সরকারি অফিস থেকে লাইভে সম্প্রচার করেন তিনি। সেই সঙ্গে দেশটির রাজধানীর নাম দেন ডাবলানডিয়া।
স্লোজামাস্তানকে আলাদা দেশ ঘোষণার দেড় বছর হলো। এরই মধ্যে সেখানে অদ্ভুত সব আইন জারি করেছেন উইলিয়ামস। যেমন– স্লোজামাস্তানে জুতা পরা নিষিদ্ধ। সেই সঙ্গে রয়েছে দেশটির নিজস্ব পাসপোর্ট, পতাকা ও মুদ্রা। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে বাজানোর জন্য রয়েছে জাতীয় সংগীত।
উইলিয়ামসের দাবি, স্লোজামাস্তানে মোট ৫০০ জন নিবন্ধিত নাগরিক রয়েছেন। এ ছাড়া আরও সাড়ে ৪ হাজার মানুষ শর্তসাপেক্ষে দেশটিতে নিবন্ধিত কিংবা অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছেন। নিজের তৈরি ‘মাইক্রোনেশন’ বা অণুরাষ্ট্রে পর্যটকদের ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন উইলিয়ামস।
জাতিসংঘ স্বীকৃত ১৯৩টি দেশের সবক’টি ভ্রমণ করেছেন উইলিয়ামস। তাঁর ভ্রমণ করা সর্বশেষ দেশ তুর্কমেনিস্তান। এই দেশে যাওয়ার আগে তিনি সিএনএনকে বলেন, ‘স্লোজামাস্তান তৈরির একটি কারণ, আমি ১৯৩তম দেশের পর ১৯৪তম দেশও চেয়েছিলাম, যাতে ভ্রমণ করতে পারি।’
বিভিন্ন দেশ ভ্রমণকালে কয়েকটি স্বঘোষিত মাইক্রোনেশনে যান উইলিয়ামস, যা প্রায় উদ্ভট সব নেতা দ্বারা পরিচালিত। এসব জায়গা ভ্রমণের পরই মূলত মাইক্রোনেশন তৈরির পরিকল্পনা করেন তিনি। ২০২১ সালের আগস্টে তিনি ১৯ হাজার মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট রুট ৭৮-এর কাছাকাছি এবং সানদিয়েগোর উত্তর-পশ্চিমে আড়াই ঘণ্টার দূরত্বে একটি জায়গা কেনেন। এরপর ডিসেম্বরে স্লোজামাস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
সরকার ব্যবস্থা নিয়ে উইলিয়ামস জানান, বেশিরভাগ সময় তিনি স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার পরিচালনা করেন। যদিও দেশের নামের আগে ‘রিপাবলিক’ শব্দটি যুক্ত রয়েছে। মাঝে মাঝে বিশেষ ভোট ও গণভোটের আয়োজন করেন। সম্প্রতি দেশের জাতীয় ফল, খেলা ও পশু কী হবে, সেসব নিয়ে নাগরিকদের ভোট প্রদানের অনুমতি দিয়েছেন।
ছবি তোলা এবং জনসাধারণের সামনে যাওয়ার সময় উজ্জ্বল সবুজ রঙের সুলতানি পোশাক পরতে পছন্দ করেন উইলিয়ামস। এ ছাড়া তিনি রক্ষী ভাড়া করে চারপাশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। দেশটি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টাও করছেন উইলিয়ামস। সম্প্রতি তিনি স্লোজামাস্তানের পাসপোর্ট দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রসহ মোট ১৬টি দেশ ভ্রমণ করেছেন।
উইলিয়ামস বলেন, একটি সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র হওয়ার জন্য যেসব মানদণ্ড পূরণের প্রয়োজন, স্লোজামাস্তান তার সবই পূরণ করেছে। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে স্লোজামাস্তানকে মাইক্রোনেশন হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করছেন উইলিয়ামস। যদিও এটি আদায় খুব সহজ হবে না মনে করছেন তিনি।
উইলিয়ামস বলেন, ‘আমি হতাশ। কারণ ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ও মাইস্পেসে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে স্বীকৃতি দেওয়ার আবেদন জানিয়েছি। ই-মেইল ও সরাসরি বার্তা পাঠানোর পরও সেগুলো অপঠিত রাখা হয়েছে। সম্ভবত সেগুলো স্প্যাম ফোল্ডারে আটকে গেছে। তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।