কুসুম শিকদারের রীতিমতো ১০২ ডিগ্রি জ্বর! সঙ্গে মাথাব্যথা। চোখে যেন কিছুই দেখছেন না। নিজেকেই শুটিংয়ের সবকিছু তদারক করতে হয়েছে। কোনো ভুল হলে মাসুল তাঁকেই দিতে হবে।
ভক্তদের প্রশ্ন থাকতে পারে, অভিনেত্রীর আবার এত চাপ কেন? ক্যারিয়ারে প্রথমবার সিনেমার প্রযোজক, পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে নাম লিখিয়েছেন যে। সিনেমাটিতে আবার নিজে অভিনয়ও করেছেন। ‘ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ’ হিসেবে শুটিংয়ের সেই অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করলেন এই অভিনেত্রী।
‘গহীনে শব্দ’, ‘লাল টিপ’, ‘শঙ্খচিল’ দিয়ে আলোচনায় আসা এই অভিনেত্রী এবার ‘শরতের জবা’ সিনেমা নিয়ে ফিরছেন। গল্পটি তাঁর লেখা ‘অজাগতিক ছায়া’ গল্পগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
নতুন পরিচয় কতটা উপভোগ্য ছিল? প্রশ্ন শুনে কুসুম বললেন, ‘কী যে বলেন। চিন্তায় আমি শেষ। নিজে না ঘুমিয়ে, ঠিকমতো না খেয়ে অন্যদের ভালো রাখতে হয়েছে। ২০০ কলাকুশলীর বিশাল টিম। কে কী খাবে, কোথায় থাকবে, এসব দায়িত্ব আমাকে পালন করতে হয়েছে। পাশাপাশি অভিনয়ও করতে হয়েছে। অভিনয় করিয়েও নিতে হয়েছে। ক্যাপ্টেন হিসেবে চাপটা আমার কাঁধেই ছিল।’
শুটিংয়ের জন্য দাদার বাড়ি নড়াইলের প্রহরডাঙ্গা গ্রামকে বেছে নিয়েছিলেন কুসুম। সেই গ্রামে কোনো হোটেল–রিসোর্ট নেই, আধুনিক সুযোগ–সুবিধাও নেই। এর মধ্যে ২০০ জনের থাকার ব্যবস্থা করতে হয়েছে।
কীভাবে করলেন, জানতে চাইলে কুসুম বলেন, ‘কেউ আমাদের বাড়িতে ছিলেন, কেউ চাচার বাড়ি। মামা খালা ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে ছিলেন। কেউ স্কুলেও ছিলেন। এত দিন শুধু নিজের থাকা–খাওয়ার দিকে নজর দিয়েছি। প্রযোজক হওয়ার কারণে এবার খুব কাছ থেকে বুঝতে পারলাম দায়িত্বটা অনেক কঠিন। সব ঠিকমতো পালন করতে হবে। না হলে নিজেরই ক্ষতি।’
প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে কলাকুশলী, সবার শিডিউল, কাজের তালিকা—নিজেকেই করতে হয়েছে। এর মধ্যে শুটিংয়ে যাওয়ার আগে আরেক বিপদ। লোকেশনে যাওয়ার আগে হঠাৎ শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। এ অবস্থায় শুটিং বাতিল করলে শিডিউল মেলাতে কয়েক মাস লেগে যাবে। আবার শুটিং করলেও ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। এসব ঝুঁকি আর দুশ্চিন্তাকে সঙ্গী করেই বিশাল টিম নিয়ে রওনা হন নড়াইল। পরে অবশ্য ভালোভাবেই শুটিং শেষ করেছেন।
কত দিন অভিনয় করি না। নিয়মিত কোনো কিছুর অভ্যাস না থাকলে যা হয়। তবে মানসিক চাপ নিয়ে শুটিং করতে হয়েছে। সিনেমার পরিচালক ও অভিনেত্রী হওয়ার কারণে এই ক্যামেরার সামনে, এই পেছনে। আবার প্রযোজক হওয়ার কারণে পুরো টিম সামলাতে হয়েছে। সব মিলিয়ে নতুন এক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘পুরো শুটিংয়েই আমার সঙ্গে ছিলেন বাবা। শুটিং টিমের সবার দেখভাল করেছেন। তা ছাড়া গ্রামে বাবার স্কুল আছে। সেখানকার অনেক শিক্ষকের সহযোগিতায় শুটিং করতে পেরেছি। তাঁদের সবার কাছে কৃতজ্ঞতা।’
কুসুমের অনেক দিনের ইচ্ছা, নিজের প্রোডাকশন হাউস থেকে সিনেমা বানাবেন। অবশেষে সেই ইচ্ছা পূরণ হতে চলেছে। অনেকটা গোপনে গত সেপ্টেম্বরে শুটিং শেষ করেছেন। ডাবিংও শেষ। এখন কালার গ্রেডিং চলছে। গোপনে শুটিং করা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি তো চুপচাপই থাকি। সে জন্য কাউকে জানাইনি। তা ছাড়া সিনেমা নিয়ে আমি চিন্তিত ছিলাম। একসঙ্গে অভিনয়, ডিরেকশন, প্রযোজনা নিয়ে চাপে ছিলাম।’
‘শরতের জবা’ ছবিতে কুসুমের সহ–অভিনেতা ইয়াশ রোহান। প্রথমবার জুটিবদ্ধ হয়েছেন তাঁরা। ইয়াশ বলেন, ‘গল্প নিয়ে এখন কিছু বলা যাবে না। তবে আমাকে একজন মেডিকেল স্টুডেন্টের চরিত্রে দেখা যাবে।’ জানা যায় সিনেমাটি ভৌতিক ও অতিপ্রাকৃত ঘরানার।
‘শঙ্খচিল’ সিনেমায় শেষবার কুসুমকে দেখা গেছে। জানালেন, দীর্ঘ বিরতির পর ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে কিছুটা নার্ভাস লাগছিল, ‘কত দিন অভিনয় করি না। নিয়মিত কোনো কিছুর অভ্যাস না থাকলে যা হয়। তবে মানসিক চাপ নিয়ে শুটিং করতে হয়েছে। সিনেমার পরিচালক ও অভিনেত্রী হওয়ার কারণে এই ক্যামেরার সামনে, এই পেছনে। আবার প্রযোজক হওয়ার কারণে পুরো টিম সামলাতে হয়েছে। সব মিলিয়ে নতুন এক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।