বাশার আল আসাদের ২৪ বছরের ‘সাম্রাজ্য’এর পতন হয়েছে। প্রবল বিদ্রোহের মুখে সিরিয়া ছেড়ে পালিয়েছেন বাশার। দেশ ছেড়ে সপরিবারে রাশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন সিরিয়ার সদ্যপ্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। রাজধানী দামাস্কাসের পাশাপাশি একের পর এক শহর দখল করে নিয়েছেন বিদ্রোহীরা। দীর্ঘ ৫৪ বছরের নিরঙ্কুশ পরিবারতন্ত্রের ‘পতন’ লেখা হয়ে গিয়েছে মাত্র ১২ দিনেই! কিন্তু কোথায় গেল বাশারের বিশাল সৈন্যবাহিনী? কয়েক দশক ধরে যারা বাশারের ‘দুর্গ’ রক্ষা করে এসেছে?
ইতিহাস বলছে, ২০০০ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের সিংহাসনে বসেন বাশার। তার আগে তাঁর বাবা হাফিজ় আল আসাদ দীর্ঘ দিন ওই কুর্সিতে ছিলেন। ১৯৭০ সালে সিরিয়ায় একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন তিনি। তার পর থেকে একনায়কের মতোই সিরিয়া ‘শাসন’ করেছে আসাদ-পরিবার। একের পর এক বিদ্রোহ, গণহত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের একাধিক অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে অনুগত সেনাবাহিনী। বাবার মৃত্যুর পর বাবার প্রদর্শিত পথে হেঁটেছেন বাশারও। সে বারও প্রশ্ন উঠেছে, কিন্তু লাভ হয়নি! গত ১৩ বছর ধরে কড়া হাতে যাবতীয় বিদ্রোহ দমন করেছে বাশারের প্রশাসন, আর তাঁর দুর্গ রক্ষা করেছে তিন লক্ষ সেনা!
২০১১ সাল থেকে বাশার-সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেন সাধারণ মানুষ। শুরু হয় সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ। প্রথম থেকেই এই যুদ্ধে বিদ্রোহীদের সমর্থন করেছিল আমেরিকা। অন্য দিকে, সিরিয়া সরকারের পাশে দাঁড়ায় ‘বন্ধু’ রাশিয়া এবং ইরান। কিন্তু গত ২৭ নভেম্বর থেকে পাশা উল্টোয়। সিরিয়ার বিদ্রোহী সশস্ত্র দুই গোষ্ঠী ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’র যৌথবাহিনীর আগ্রাসনের মুখে কোণঠাসা হয়ে পড়ে সিরিয়ার সরকার। রবিবার রাজধানী দামাস্কাসের পাশাপাশি একের পর এক শহর চলে যায় বিদ্রোহীদের দখলে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, প্রায় বিনা বাধাতেই রাজধানী ‘দখল’ করে নিয়েছেন বিদ্রোহীরা। মিত্র দেশগুলিও বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত থাকায় প্রয়োজনীয় সাহায্যও পাননি বাশার। ফলে বিদ্রোহীদের আগ্রাসনের মুখে কোনও প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেনি তার বাহিনী। রণে ভঙ্গ দিয়ে পালায় বাশারের তিন লক্ষ সেনা। আসাদদের দুর্গের দখল নেয় বিদ্রোহী জনতা। দামাস্কাসকে ‘স্বাধীন’ শহর বলে ঘোষণা করা হয়। আসাদদের ‘স্বৈরাচারী শাসন’ থেকে সিরিয়া মুক্ত হয়েছে, এই মর্মে প্রচার শুরু হয়ে যায়। বাশার দামাস্কাস ছাড়তেই শুরু হয় উল্লাস। চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ গাজ়ি জালালিও জানিয়ে দেন, তিনি ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত। তবে তা হোক শান্তিপূর্ণ ভাবে। এর পরেই কাতারের দোহায় সিরিয়ার দূতাবাসে শুরু হয়ে যায় ‘স্বাধীনতা’ উদ্যাপন।
মাত্র দু’সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যেই যবনিকা পতন হল ৫৪ বছরের স্বৈর-শাসনের! ১৩ বছরের চেষ্টায় যা হয়নি, মাত্র ১২ দিনেই তা করে দেখালেন বিদ্রোহীরা! তার জেরে পলাতক সিরিয়ার সেনাবাহিনীর তিন লক্ষ সৈন্য। বাশারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে সিরিয়ায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা গৃহযুদ্ধ শেষ হবে বলে আশাবাদী জনতা।