সরকারি চাকরিতে কোটার ব্যাপারে ছাত্র-তরুণদের দাবি অবশ্যই ন্যায্য এবং যৌক্তিক বলে মনে করে বিএনপি। একই সঙ্গে কোটাবিরোধী চলমান আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে দলটি।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। সেখানে ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পৃথক যৌক্তিক আন্দোলনে দলের নৈতিক সমর্থনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
বিএনপি কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ভর করছে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপি তো একটি রাজনৈতিক দল। দেশের ভেতরে যা হচ্ছে, তার প্রতিক্রিয়া তো বিএনপিকে দিতেই হবে। এটা ছাত্রদের আন্দোলন। এখানে বিএনপির সম্পৃক্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তাই বলে ন্যায্য আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন করব না?’
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারি চাকরিতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, নারী, শারীরিক প্রতিবন্ধীসহ কিছু ক্ষেত্রে কোটা থাকতে পারে। সেটা কিছুতেই ৫৬ শতাংশ নয়, বড় জোর ৫ থেকে ১০ শতাংশ হতে পারে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি কোনও শ্রেণিতেই কোটা পদ্ধতি মেধা বিকাশে সহায়ক হতে পারে না। মেধাভিত্তিক বৈষম্যহীন জাতি ও সমাজ বিনির্মাণ মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে এসে প্রযুক্তি ও জ্ঞানভিত্তিক বৈশ্বিক ব্যবস্থায় টিকে থাকতে হলে মেধাভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কোনও বিকল্প নেই। এ জন্য সাধারণ ছাত্র সমাজের কোটা সংস্কার আন্দোলনের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে আমারা একমত।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব পেনশন স্কিম প্রত্যাহারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন সমর্থনেরও ব্যাখ্যা দেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগে আমি (শিক্ষক-কর্মকর্তা) যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতাম, সেগুলো থেকে আমাকে সরিয়ে নিচে নিয়ে যাবেন, সেটা তো হয় না। শিক্ষকদের বিষয়টি সংবেদনশীল এই কারণে যে তাঁদের তো অন্য কোনো আয়ের উৎস নেই। অন্যান্যদের চুরিচামারি, দুর্নীতি ইত্যাদি ইত্যাদি থাকতে পারে, তাঁদের তো সেটা নেই। তাঁদের বেতনের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়।’
সর্বজনিন পেনশন স্কিম সরকারের দুর্বল আর্থিক খাত মেরামতের একটা কৌশল মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় কোষাগার প্রায় শূন্য, ব্যাংকিং খাত প্রায় দেউলিয়া। এ রকম লুটেরা তন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য পেনশন স্কিমের মতো আরও স্কিম চালু করে জনগণের পকেট শূন্যে করতে চায় সরকার।’
তিনি বলেন, ‘সরকার তথাকথিত উন্নয়নের নামে জনগণের ঘাড়ে ব্যয়ের বোঝা চাপাচ্ছে। সরকারের উন্নয়নের বুলি যদি এতই শক্তিশালী হয়, তাহলে পেনশন বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। জনগণ পেনশন স্কিমসহ সরকারের সব প্রকল্প প্রত্যাখ্যান করছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কর্মচারীদের যৌক্তিক আন্দোলন সমর্থন করছি। অবিলম্বে পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি।’