The news is by your side.

কৈলাস পর্বত মানুষের জন্য ‘নিষিদ্ধ স্থান’

0 82

 

তিব্বতে মানস সরোবরের ধারে কৈলাস পর্বতের হিমঘেরা আবাস থেকে শরতে মা দুর্গা নেমে আসেন বাংলার মাটিতে। তার পর দিন পাঁচেকের পিত্রালয়বাস কাটিয়ে হৈমবতী ফিরে যান পতির আলয়ে। শুধু হিন্দু ধর্মে নয়, তিব্বতের প্রাচীন ধর্ম বন আবং, সেই সঙ্গে জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মেও কৈলাস পর্বত ‘পবিত্র’ বলে বিবেচিত। আর সে কারণেই নাকি মানুষ আজ পর্যন্ত কৈলাসে আরোহণ করতে পারেনি।

বিভিন্ন ধর্মেই কৈলাস পর্বতকে মানুষের জন্য ‘নিষিদ্ধ স্থান’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কৈলাস শুধুমাত্র দুর্গম অঞ্চলে অবস্থিত বলেই নয়, বিভিন্ন ধর্মে তার গুরুত্বের জন্যও যেন এই পর্বতে আরোহণের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত রয়েছে।

কৈলাস পর্বতের উচ্চতা ২১ হাজার ৭৭৮ ফুট। বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের তুলনায় বেশ খানিকটা কম। কিন্তু এভারেস্ট ‘অজেয়’ পর্বতশৃঙ্গ নয়। অথচ কৈলাসের শিরে ‘অজেয়’ তকমাটি বসানো।

কৈলাসে আরোহণের ব্যাপারে উদ্যোগ শুরু হয় ভারত তথা পূর্ব এশিয়ায় ব্রিটিশ প্রাধান্য বিস্তারের পর থেকে। কিন্তু তিব্বতের বজ্রযানী বৌদ্ধ ঐতিহ্য জানায়, মহাসাধক মিলারেপাই নাকি একমাত্র মানুষ, যিনি কৈলাসশীর্ষে পৌঁছতে পেরেছিলেন। তবে, এই কাহিনি অনেকাংশেই কিংবদন্তি-নির্ভর এবং প্রতীকী।

বজ্রযানী বৌদ্ধ ধর্মে কৈলাসকে ‘মেরুপর্বত’ বলে উল্লেখ করা হয়। এবং মনে করা হয়, এই মেরুপর্বতই বিশ্বসংসারের কেন্দ্র। কৈলাসের পাদদেশে প্রতি বছরই বৌদ্ধেরা তীর্থযাত্রা করেন। কিন্তু, এই পর্বতে আরোহণের কথা তাঁরা ভাবতেও পারেন না।

বজ্রযানী কিংবদন্তি অনুসারে, তিব্বতের প্রাচীন ধর্ম বন-এর অন্যতম ধর্মগুরু নারো বন-চুংয়ের সঙ্গে মিলারেপার প্রবল বিতর্ক হয়। নারোকে কৈলাসে আরোহণের ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ জানান মিলারেপা। নারো ব্যর্থ হন। কিন্তু মিলারেপা কৈলাস শৃঙ্গে পৌঁছন।

মিলারেপার এই কাহিনি সম্ভবত প্রতীকী। এই কাহিনির মাধ্যমে তিব্বতের আদি ধর্ম বন-এর উপরে বজ্রযানী বৌদ্ধধর্মের বিজয়কেই বর্ণনা করা হয়।

কৈলাসে আরোহণের নিষেধাজ্ঞার নেপথ্যে রয়েছে বেশ কিছু বাস্তব সমস্যা। কৈলাস পর্বতের আকৃতি পিরামিডের মতো। তার উপরে সারা বছরই এই পর্বত তুষারাচ্ছন্ন থাকে। খাড়া, পিচ্ছিল পর্বতগাত্র বেয়ে ওঠা এক প্রকার অসম্ভব।

কৈলাস পর্বতকে আরও বেশি দুর্গম করে রেখেছে এই অঞ্চলে সর্বদা প্রবাহিত ঝোড়ো হাওয়া। হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় এই বাতাসের বিরুদ্ধে ল়ড়াই করে বরফাবৃত খাড়া ঢাল বেয়ে এই পর্বতে আরোহণ প্রায় অসম্ভব বলেই স্বীকার করেছেন পর্বতারোহীরা।

ভারত ও সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে ব্রিটিশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর শুরু হয় হিমালয় ও তিব্বতের ভূপ্রকৃতিকে সানুপুঙ্খ ভাবে জানার প্রচেষ্টা। ১৯২৬ সালে ব্রিটিশ আমলা তথা পর্বতারোহী হিউ রুটলেজ কৈলাসের উত্তর দিকটিকে পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি জানান, এই পর্বত আরোহণের অযোগ্য।

রুটলেজের সঙ্গে ছিলেন কর্নেল আরসি উইলসন। তিনি অন্য এক দিক থেকে কৈলাসে আরোহণের চেষ্টা করছিলেন। তাঁর সঙ্গী এক শেরপা তাঁকে জানান, কৈলাসের দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে আরোহণ সম্ভব হলেও হতে পারে। উইলসন পরে জানিয়েছিলেন, তিনি শেরপার কথা মেনে আরোহণ শুরু করেন। কিন্তু, বিপুল তুষারপাতের কারণে তিনি ব্যর্থ হন এবং কৈলাস অভিযান অসম্ভব বলে স্বীকার করেন।

১৯৩৬ সালে অস্ট্রিয়ান ভূতত্ত্ববিদ এবং পর্বতারোহী হারবার্ট টিচি গুরলা মান্ধাতা পর্বতাঞ্চলে অভিযান চালান। সেই সময় তিনি স্থানীয় জনপদগুলিতে খোঁজ নিতে থাকেন কৈলাসের বিষয়ে। তাঁর প্রধান জিজ্ঞাসা ছিল— কৈলাস কি আদৌ আরোহণযোগ্য। জনৈক তিব্বতি গোষ্ঠীপতি তাঁকে জানান, কেবলমাত্র সম্পূর্ণ রূপে পাপশূন্য মানুষই কৈলাসে আরোহণ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তিনি মানুষ থেকে একটি পাখিতে রূপান্তরিত হন এবং সোজা কৈলাসশীর্ষে উড়ে যেতে পারেন। বলাই বাহুল্য, গোষ্ঠীপতির এই বক্তব্যে রয়েছে আধ্যাত্মিক ব্যঞ্জনা।

আশির দশকের মাঝামাঝি নাগাদ চিন সরকার ইটালির পর্বতারোহী রেইনহোল্ড মেসনারকে কৈলাস অভিযানের ব্যাপারে উৎসাহ দিতে থাকে। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি।

চিন সরকার এক স্পেনীয় অভিযাত্রী দলকে কৈলাস আরোহণের অনুমতি দেয়। কিন্তু সেই অভিযানও ব্যর্থ হয়। ২০২৩ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কোনও মানুষ কৈলাসশীর্ষে আরোহণ করতে পারেননি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.