শক্তিশালী কুয়েতের বিপক্ষে চোখে চোখ রেখে লড়াই করেও ভাগ্য সহায় হয়নি বাংলাদেশের। জমাট রক্ষণে শক্তিশালী কুয়েতকে নির্ধারিত ৯০ মিনিট পর্যন্ত রুখে দেয় তারিক কাজী-তপু বর্মনরা। এতে শেষ পর্যন্ত গোলশূন্য ড্র’তে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। কিন্তু অতিরিক্ত সময়ের প্রধমার্ধের শেষ দিকে আবদুল্লাহ আল ব্লাউসির গোলে ১-০ ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করে সাফের ফাইনালে উঠেছে কুয়েত। ডিফেন্সের এক ভুলে ভেঙে গেল ১৮ বছর পর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলার স্বপ্ন।ভুলটা করলেন বাংলাদেশের রক্ষণভাগের সবচেয়ে অভিজ্ঞ সদস্য তপু বর্মণ।
ব্যাঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধের দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ফর্মে থাকা মোরসালিনের দুর্বল ফিনিশিংয়ে তা আর সম্ভব হয়নি। বিশ্বনাথের লম্বা থ্রো-ইন থেকে ডান প্রান্ত দিয়ে রাকিবের নিচু ক্রস বক্সে পেয়েছিলেন মোরসালিন। কিন্তু প্রথম দফায় ফাঁকায় গোলকিপারের গায়ে মেরে প্রথম সুযোগটি নষ্ট করেছেন তিনি। ফিরতি বল দ্বিতীয় দফায় কাছে পেলেও তা ঠিকমতো আয়ত্তে নিতে পারেননি ১৭ বছর বয়সী এই তরুণ।
প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধেও বাংলাদেশ একবার গোল বঞ্চিত হয়েছে। মোরসালিনের বাড়ানো বলে রাকিব বক্সে প্রবেশ করে কোনাকুনি শট নেন। ক্রসবারে লেগে বল বাইরে দিয়ে চলে যায়। মুহুর্মুহু আক্রমণে ম্যাচের ৬১ মিনিটে নিজেদের প্রথম গোলের দেখা পেয়ে যেত কুয়েত। কিন্তু বাংলাদেশের দেয়াল হয়ে দাঁড়ান গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। ম্যাচে আর দুই মিনিট না যেতেই আবারো সুযোগ পায় কুয়েত। আবারো সেই জিকোর দৃঢ়তায় রক্ষা পায় বাংলাদেশ।
অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের ক্লান্তি স্পষ্টই চোখে পড়ছিল। কুয়েতের খেলোয়াড়দের সঙ্গে শারীরিকভাবে কিছুতেই আর পেরে উঠছিল না। তাই দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে টাইব্রেকারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষেই খেলা শুরু করে তারা। আর ভুলটাও সেখানেই করে। তখন যেন কুয়েত ও বাংলাদেশের গোলরক্ষক জিকোই প্রতিপক্ষ। দারুণ বিশ্বস্ত হাতে একের পর এক শট ঠেকিয়ে যাচ্ছিলেন জিকো। প্রমাণ দিচ্ছিলেন কেন তাকে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলরক্ষক মানা হয়।
তবে যোগ করা সময়ে আর পেয়ে ওঠেননি জিকো। ১০৬ মিনিটে কুয়েতের একটি আক্রমণ থেকে কোনাকুনি প্লেসিং শটে গোল করেন আব্দুল্লাহ আম্মার বলৌসি। ম্যাচ এখানেই শেষ। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষাতেই বোঝা যাচ্ছিল হার মেনে নেওয়ার।
তবে একদম শেষে যেন একটু গা ঝারা দিয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ১১৭ মিনিটে বিশ্বনাথের বাড়ানো লং বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডি বক্সে ঢুকে কোনাকুনি শট নিয়েছিলেন রাকিব। কিন্তু বিধি বাম! পা বাড়িয়ে সে শট ঠেকিয়ে দেন কুয়েতের গোলরক্ষক। কর্নার পায় বাংলাদেশ। কিন্তু গোল পাওয়া হয়নি আর।
অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটের ম্যাচ থেকেই ছিটকে যায় বাংলাদেশ। মুহুর্মুহু আক্রমণে শক্তিশালী কুয়েত বাংলাদেশের প্রতিরোধ ভাঙল প্রথম অর্ধের যোগ করা সময়ে। ডান দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা আবদুল্লাহ আল ব্লাউসিকে কড়া পাহারায় রাখতে পারেনি তপু। তার পায়ের ফাঁক দিয়েই শট নেন কুয়েতের এই ডিফেন্ডার। জিকো কিছু বুঝে উঠতে পারার আগেই বলে দূরের পোস্ট দিয়ে জড়ায় জালে। এতে ১-০ গোলের কষ্টার্জিত জয়ে কুয়েত পা রাখে সাফের ফাইনালে।