কাস্টিং কাউচ মডেলিং দুনিয়ায় নতুন কিছু নয়। কাজের বিনিময়ে কিংবা কাজের লোভ দেখিয়ে অভিনেত্রী-মডেলদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন কিংবা যৌন হেনস্তাকে বলা হয়ে থাকে কাস্টিং কাউচ। বিষয়টি নিয়ে কয়েক বছর আগে ‘হ্যাশট্যাগ মিটু’ আন্দোলনের ঝড় উঠেছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয়।
এবার মডেলিংয়ের অন্ধকার জগৎ নিয়ে আস্ত একটা তথ্যচিত্র নির্মাণ হয়েছে।
স্কাউটিং ফর গার্লস:
ফ্যাশনস ডার্কেস্ট সিক্রেট নামে এই তথ্যচিত্রে চারজন নারী নিজেদের সঙ্গে ঘটা যৌন নির্যাতনের কথা শেয়ার করেন। জানান, মডেল হিসেবে কাজ করার সময় তাদের ওপর এ নির্যাতন হয়।
এমন একজনের নাম ক্যারে সাটন। তিনি বলেন, ‘১৭ বছর বয়সে আমাকে ফ্যাশন জগতের প্রভাবশালী এক পুরুষ ধর্ষণ করেছিলেন।
‘জেরাল্ড মেরি বিয়ে করেছিলেন সুপারমডেল লিন্ডা ইভাঞ্জেলিস্তাকে। তবে যখন তার স্ত্রী শহরের বাইরে থাকতেন, তখন ওই ফরাসি এজেন্ট আমাকে ধর্ষণ করতেন। ১৯৮৬ সালে তো টানা কয়েক সপ্তাহ নির্যাতন চলে।’
জেরাল্ড-ইভাঞ্জেলিস্তার বিয়েবিচ্ছেদ হয় ১৯৯৩ সালে। এর ঠিক ২৭ বছর পর ২০২০ সালে ইভাঞ্জেলিস্তা তার সাবেক সঙ্গী মেরির অভিযুক্তদের সাহসিকতার প্রশংসা করে একটি বিবৃতিতে বলেন, ‘তাদের কথা শুনে এবং নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমি বিশ্বাস করি তারা সত্যিই বলেছে।’
সাটন যৌন হয়রানির শিকার হওয়া ১১ নারীর মধ্যে একজন যারা প্যারিস প্রসিকিউটরের কাছে সাক্ষী দিয়েছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, এলিট মডেলিং এজেন্সির সাবেক ইউরোপীয় প্রধান জেরাল্ড তাদের যৌন হেনস্তা করেছেন।
ফরাসি আইনে, যৌন নির্যাতনের ২০ বছরের মধ্যে এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ৩০ বছরের মধ্যে অভিযোগ করতে হয়।
সাটন বিশ্বাস করেন, দুই দশকে আরও বেশ কয়েকজন জেরাল্ডের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
স্কাই নিউজকে তিনি বলেন, ‘অপরাধীদের কখনও পরিবর্তন হয় না। আমার এগিয়ে আসার কারণ, আমার কন্যাসন্তান আছে। আমি চাই না, সে আমার মতো ট্রমার শিকার হোক।
‘এখনও ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি অনিয়ন্ত্রিত এবং আপত্তিজনক। যে কারণে বেশির ভাগ নাবালিকা এবং অল্পবয়সীদের সঙ্গে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।’
মডেলিংশিল্পের অপব্যবহার
ফ্যাশনস ডার্কেস্ট সিক্রেট নামে একটি নতুন তথ্যচিত্রে মডেল হিসেবে কাজ করার সময় সাটন এবং আরও তিনজন নারী যৌন নির্যাতনের বর্ণনা দেন।
তিনি জানান, তিনি জানান, তাকে ফটোগ্রাফারদের বাড়িতে কাস্টিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছিল। সেখানে তাকে শরীর দেখাতে বলা হয়।
‘এটি তাদের কাছে খুব স্বাভাবিক বিষয় ছিল। এমনকি আমাদের গভীর রাতে তাদের কাছে যেতে হতো।’
এজেন্টদের মাধ্যমে বিক্রি
জিল ডড নামে একজন মডেল বলেন, ‘১৯৮০ সালে প্যারিসে একটি নাইট আউটের পর জেরাল্ড আমাকে ধর্ষণ করেছিলেন। আমার বয়স তখন ছিল ২০।’
পরে জিল আদনান খাশোগির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। আদনান প্রয়াত সৌদি অস্ত্র ব্যবসায়ী, যিনি একসময় বিশ্বের ধনী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। ৫০ হাজার ডলারের বিনিময়ে আদনানের সঙ্গে জিলের পরিচয় করিয়ে দেয় মডেল এজেন্সি প্যারিস প্ল্যানিং।
‘আমরা অল্পবয়সী ছিলাম। এজেন্টদের কাছ থেকে সুবিধা নেয়ার জন্য আমাদের বিক্রি করে দেয়া হতো।’