বাতি না জ্বললেও, অবশেষে প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে কান উৎসবের বাণিজ্যিক বিভাগ মার্শে দ্যু ফিল্মে বরাদ্দ নেওয়া বাংলাদেশের প্রথম স্টলে। বুধবার দুপুরে এখানে সমবেত হন বাংলাদেশের বেশ ক’জন পরিচালক-প্রযোজক। স্টলের দেয়ালে ঝুলানো হয়েছে বাংলাদেশ থেকে আসা অরণ্য আনোয়ারের ‘মা’ সিনেমার পোস্টার-ব্যানার।
কান উৎসবের দ্বিতীয় দিনেও জ্বলেনি স্টলটির বাতি কিংবা প্রজেক্টর মনিটর। কারণ, বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের (বিএফডিসি) দায়িত্বশীল কেউ এখনও এসে পৌঁছাননি কানসৈকতে। এ নিয়ে স্টলের চেয়ারে বসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ‘মা’ সিনেমার নির্মাতা-প্রযোজক অরণ্য আনোয়ার ও অন্যতম প্রযোজক পুলক কান্তি বড়ুয়া। কারণ, তাদের ছবিটি মূলত বিএফডিসি’র তত্ত্বাবধানেই কান উৎসবের বাণিজ্যিক প্রদর্শনীতে এসেছে।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অরণ্য আনোয়ার বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন আর পরিকল্পনা নিয়ে বিএফডিসির আশ্বাস পেয়ে আমরা ছবিটি নিয়ে এতদূর এসেছি। স্পন্সর জোগাড় করেছি। কিন্তু গত দুই দিন আমরা পুরোপুরি অন্ধকারে ছিলাম। এই স্টল খুঁজে পাচ্ছিলাম না। সংশ্লিষ্ট কারও কাছ থেকে তথ্য মিলছিল না, আসলে হচ্ছেটা কী! আশার কথা হলো, নিজেরা কান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পুরো বিষয়টি তুলে ধরে ছবিটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে পেরেছি। আপাতত এটাই আমাদের জন্য স্বস্তির বিষয়। এর বাইরে এই অন্ধকারে পড়ে থাকা স্টল নিয়ে কিছু বলতে চাই না।’
প্রযোজক পুলক কান্তি বড়ুয়া জানান, দেশের স্টল নিথরভাবে পড়ে আছে দেখে তিনি হতবাক হয়েছেন। তার কথায়, “মার্শে দ্যু ফিল্মে হাজারখানেক স্টল চোখে পড়লো। এরমধ্যে পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশের স্টল রয়েছে। সবটাতে আলো জ্বলছে। গমগম করছে শিল্পী-নির্মাতা-পরিবেশকদের উপস্থিতি। অথচ আমাদের স্টল দুই দিন ধরে পড়ে আছে অন্ধকারে-অনাদরে। মূলত সেই দুঃখ মোছার জন্য আমি ও আমার পরিচালক অরণ্য আনোয়ার নিজেরাই আজ এসে ‘মা’ ছবির ব্যানার-পোস্টার দিয়ে স্টলটিকে সাজানোর চেষ্টা করছি। ভাবছি বিএফডিসি’র কেউ না আসা পর্যন্ত আমরাই এই স্টল পাহারা দেবো। কারণ, এই দূর পরবাসে এটাই আমার মা, এটাই বাংলাদেশ।”
কান থেকে ঢাকায় যোগাযোগ করে বুধবার স্থানীয় সময় রাত ৯টা নাগাদ (বাংলাদেশ সময় ১৮ মে রাত ১টা) নিশ্চিত হওয়া গেছে, এখনও বিএফডিসির প্রতিনিধিদলের সদস্যরা কানের উদ্দেশ্যে রওনা হননি। এদিকে উৎসবের পর্দা ২৭ মে নামলেও ২৪ মে শেষ হয়ে যাবে মার্শে দ্যু ফিল্মের কার্যক্রম। ফলে অনুমান করাই যায়, বাংলাদেশ স্টলের সঙ্গে যুক্ত যারা, তারা শেষ পর্যন্ত এলেও সব হবে পণ্ডশ্রম। কারণ তখন সময়ই যে আর থাকবে না! যদি তাই হয়, তাহলে সেটি হবে দেশের জন্য লজ্জাজনক ব্যাপার।
বাংলাদেশ স্টলের আশেপাশে থাকা অন্যান্য স্টলের মানুষজন নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছেন, কেন এই স্টল এভাবে নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে আছে! যার সদুত্তর নেই বাংলাদেশ থেকে যাওয়া সাংবাদিক-নির্মাতাদের কাছেও।
এবারের কানের অফিশিয়াল সিলেকশনে নেই বাংলাদেশের কোনও ছবি। উৎসবের বাণিজ্যিক শাখা মার্শে দ্যু ফিল্মের মার্কেট স্ক্রিনিংয়ে দেখানো হবে পরীমণি অভিনীত ‘মা’ (দ্য মাদার)। এর প্রদর্শনী হবে আগামী ২০ মে সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে (স্থানীয় সময়) পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের পালে-ই থিয়েটারে।
অন্যদিকে ছবি নিয়ে না এলেও এবারের উৎসব ঘুরে দেখতে ঢাকা থেকে এসেছেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ, স্বপন আহমেদ, নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামূল, সাজ্জাদ খান। তারা প্রত্যেকে মার্শে দ্যু ফিল্মের বিভিন্ন দেশের স্টল ঘুরে নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শেয়ার করছেন।
দেশের অন্যতম জনপ্রিয় নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ বলেন, ‘বাংলাদেশের স্টল বরাদ্দ নিয়েও চালু না হওয়া আমাদের জন্য হতাশারই বটে। তবে এটুকু ছাড়া পুরো উৎসব আমাদের জন্য উন্মুক্ত। আমরা গোটা বিশ্বের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে দেখার সুযোগ পাচ্ছি। প্রতিদিনই বিভিন্ন দেশের সিনেমা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিজেদের আইডিয়া শেয়ার করতে পারছি। গ্লোবালাইজেশনের এই সময়ে এটা খুবই দরকারি বলে মনে করি।’