বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, ‘করোনার “নতুন ও বিপজ্জনক ধাপে” আমরা। গত বৃহস্পতিবার এক দিনেই করোনায় সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা দেড় লাখের বেশি শনাক্ত হয়েছে, যা এক দিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের একটি রেকর্ড।’
শুক্রবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে তেদরোস বলেছিলেন, ‘আমরা বিপজ্জনক দশায় আছি।’ তাই তিনি সতর্ক করেছিলেন যে ভাইরাসের বিস্তারকে থামাতে লকডাউন ব্যবস্থা এখনো প্রয়োজন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, বৃহস্পতিবার এক দিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্তের রেকর্ড হয়েছে, যা গত ডিসেম্বরে মহামারি শুরুর পর থেকে সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নতুন সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে।
জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ৮৬ লাখ ৩৯ হাজারের বেশি করোনায় সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এতে মারা গেছে ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৪৩৭ জন। বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ শনাক্তের শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র। যেখানে ২২ লাখ ১৯ হাজার ৯৭৬ জন শনাক্ত হয়েছেন। এরপর রয়েছে ব্রাজিল। সেখানে ১০ লাখ ৩২ হাজার ৯১৩ জন শনাক্ত হয়েছেন। জনস হপকিনসের তালিকা অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে সংক্রমিত রোগী শনাক্তের দিক থেকে বাংলাদেশ ১৭ নম্বরে। দেশে মোট শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৫৩৫ জন।
সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার শনাক্ত হওয়া রোগীদের অর্ধেকের বেশি যুক্তরাষ্ট্রের। এরপর উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় দক্ষিণ এশিয়ার রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
গেব্রেয়াসুস বলেন, ভাইরাস এখন দ্রুত ছড়াচ্ছে, এটা এখনো মারাত্মক এবং অধিকাংশ মানুষ এখনো সংক্রমণ সংবেদনশীল। অনেক লোক বাড়িতে থাকার কারণে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন, যা সহজে বোধগম্য এবং অনেক দেশ লকডাউন তুলে দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করছে। তবে যেহেতু এটি এখনো দ্রুত ছড়াচ্ছে, তাই সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক পরা ও হাত ধোয়ার মতো বিষয়গুলো এখনো গুরুত্বপূর্ণ।
গেব্রেয়াসুস বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে শরণার্থীদের ওপর বেশি প্রভাব পড়বে। তাঁরা বেশির ভাগই উন্নয়নশীল দেশগুলোয় বাস করছেন। আমাদের কোভিড–১৯ শনাক্ত, প্রতিরোধ ও সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় দৈনিক সংক্রমণের হার সমানতালে এগিয়ে চলা সত্ত্বেও করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আর বিস্তৃত লকডাউন প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির শীর্ষ সরকারি বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফাউসি।
ফাউসি বলেন, তিনি আশাবাদী যে শিগগিরই বিশ্ব একটি ভ্যাকসিন পাবে, যা মহামারির অবসান ঘটাবে। ভ্যাকসিনের প্রাথমিক পরীক্ষার ফলাফল উৎসাহব্যঞ্জক।
ক্যালিফোর্নিয়া ও টেক্সাসের মতো এলাকায় যেখানে সংক্রমণের হার বাড়ছে, সেখানে লকডাউন লকডাউনের প্রয়োজন আছে কি না, সে প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিসের পরিচালক ফাউসি বলেন, ‘আমি মনে করি না, আমরা লকডাউনে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে আর কথা বলব।’
আমেরিকা সংক্রমণের নিশ্চিত সংখ্যা ও মৃত্যুর ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষে রয়েছে। সেখানে প্রাণহানির সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। করোনাভাইরাস ছড়ানোর মূলকেন্দ্র হয়ে ওঠা নিউইয়র্ক ও নিউজার্সি, যেখানে তাদের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে, সেখানে ২০টি অঙ্গরাজ্যে সংক্রমণ বাড়তে দেখা যাচ্ছে।