করোনা মোকাবিলায় বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক।
শনিবার করোনা সংকট নিয়ে আওয়ামী লীগের বিশেষ অনলাইন আলোচনা ‘বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিক’ এর পঞ্চম পর্ব ‘করোনা সংকট মোকাবিলায় স্বাস্থ্যসেবা’ অনুষ্ঠান তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবিলায় বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এখনো বিষয়টি গঠন পর্যায়ে থাকায় বিস্তারিত বলতে পারব না আমি। কিন্তু এটি বেশ ভালো কাজ করবে।
তিনি বলেন, করোনা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য খুব কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। বাংলাদেশে এখনো করোনায় মৃত্যুর হার ১.৩ শতাংশের কম।
মন্ত্রী বলেন, এখনো নির্দিষ্ট কিছু স্থান বাদে দেশের অন্যান্য এলাকাগুলো ভালো আছে। কিন্তু আমাদের পক্ষে এই অবস্থা বজায় রাখা সম্ভব হবে না, যদি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের যাতায়াত আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি।
এ সময় প্রাথমিক পর্যায়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলো বন্ধ করে দেয়ার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, এই হাসপাতালগুলোর কার্যক্রম চালু করতে আমি ব্যক্তিগতভাবে মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। দেখা করেছি। এখন তারা আবারো খুলেছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা পরীক্ষাও করছে।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের এই সমস্যা মোকাবিলায় বৈজ্ঞানিকভাবে এবং পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান খান বলেন, অনেকেই অভিযোগ করেছেন টেস্ট কেন বাড়ানো হচ্ছে না। তাদের জন্য বলতে চাই, টেস্টের সংখ্যা বাড়াতে চেষ্টা করা হচ্ছে। আগে যেখানে কয়েকশ টেস্ট হতো, সেটা বাড়িয়ে এখন ১৪ হাজারের বেশি করা হয়েছে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টেস্টের জন্য এগিয়ে আসছে। তাদের সহায়তায় এই টেস্টের সংখ্যা ১২-১৩ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০-৩০ হাজার নেয়া সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, যে কাজটি করতে সারা বছর লাগে তা কিছুদিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে করা সম্ভব হয়েছে। আমরা একগুলো ডাক্তার একসঙ্গে নিয়োগ দিতে পেড়েছি। সামনে আরো ২ হাজার ল্যাব টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেয়া হবে। আশা করছি এর ফলে আমাদের ল্যাব টেস্টের পরিমাণ ও কার্যক্রম গতিশীল হবে।
র্যাপিড টেস্ট কিট বাংলাদেশে ব্যবহার করা উচিত কিনা এমন এক প্রশ্নের উত্তরে আলোচনায় উপস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, এখনো পৃথিবীতে এমন কোন কিট নেই, যেটা দিয়ে আস্থার সঙ্গে বলা যায় কোভিড-১৯ পজিটিভ, নাকি নেগেটিভ। এটা বিশ্বের অন্য যে কোন দেশ থেকে এনেও যদি আমরা ব্যবহার করি তাহলে ঝুঁকি থেকে যাবে। যে মানুষগুলো সংক্রামিত, তারা মনে করবেন সংক্রমিত নন। ফলে রেড জোনগুলো গ্রিন জোন হয়ে যাবে। এই মানুষগুলো ঘুরে বেড়াবে। ফলে সংক্রমণ বাড়বে। তবে এমন কোন কিট যদি আবিষ্কার হয়, তাহলে তাকে আমাদের সাধুবাদ জানানো উচিত। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমন কিছু পাওয়া যায়নি।
তিনি আরো বলেন, আমরা বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নাম এবং মোবাইল নম্বর অনলাইনে এবং বেশ কিছু গণমাধ্যমের সহায়তার ছড়িয়ে দিয়েছি যার মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজারের বেশি মানুষ ফোনে চিকিৎসা পরামর্শ নিচ্ছেন। আমি নিজেও শনিবার দুপুরে প্রায় ৪০ জনকে ফোনে সহায়তা দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আ ফ ম রুহুল হক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আশ্রাফুল হক সিয়াম।
এর আগে ‘বিয়ন্ড দ্য প্যান্ডেমিকে’র চারটি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ পর্বটি প্রচারিত হয় ২ জুন। এই পর্বে বক্তারা করোনা মোকাবিলায় সংসদ সদস্যসহ সব জনপ্রতিনিধির ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।