নির্মলেন্দু গুণ
♥
মনে হয় অস্থিরতাময় এই কথাগুলো যেন রেসকোর্সে মুজিবের সভা– শরীরে শরীর লাগা লাখো-লাখো স্বনিষ্ঠ সংলাপ।
♥
সন্ধ্যা হলে সব কথা রমনার বুকের গভীরে জমা হয়।
আমি বুঝি কর্ণকুহরে কারা সব্দিতসঘনপদপাতে কথা বলে, কথাবলাকলাকৌশলের মালা গাঁথে বসে বসে।
♥
মাগো, অন্ধকারে ভয় করো না,
আমরা ফুসফুসে আগুন জ্বেলে
তোমার জন্য ঘরে ফিরছি।
পাথরে পাথর ঘষে,
পাথরে হৃদয় ঘষে,
হৃদয়ে হৃদয়।
♥
তাড়াতে তাড়াতে তুমি কত দূর নেবে? এই তো আবার আমি ফিরে দাঁড়িয়েছি।
♥
বদল হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্র সিলেট থেকে চুয়াডাঙায়।
♥
এখন শান্ত সব, সল্টলেক একাকী ঘুমিয়ে আছে–যেন পরিত্যক্ত দেশপ্রেমিকের খালি বাড়ি– রাজকার, আল বদরের ভয়ে ভীত, মৃত, ম্রিয়মাণ।
♥
অদৃশ্য ইথার দিয়ে আমি একটি পিয়ন বানিয়েছি।
আমার সমস্ত চিঠি বিলি করে সে-পিয়ন ফিরছে হাওয়ায়।
♥
তোমার বুকে দুটো সূর্য, চোখের মধ্যে অনেক নদী, চুলের মধ্যে আগুনরঙা শীত-সকালের হুহু বাতাস।
মাটির মধ্যে মাথা রেখে তুমি এখন শুয়ে আছো, তোমাকে এখন শহীদ ছাড়া অন্যকিছু ভাবাই যায় না।
♥
কোনদিকে যাবে? কোথায় পালাবে তুমি?
পূর্বে নিশ্চিত সূর্য, পশ্চিমে শত্রুর সীমান্তে অবরোধ।
বাংলাদেশে বর্বরতার নিশ্চিত কবর।
♥
আমার বুকের মধ্যে তার উদ্ধত মৃত্যুর ছায়া, আমার হৃদয়ের মধ্যে তার অবদমনের সদাজাগ্রত ভীতিমূল, আমার জন্মভূমি হা-করা হাঙরের মুখে তোমার চুলের মতো বারবার কেঁপে উঠছে।
ট্রিসিয়া, তোমার জাহাজগুলোকে রেশমের চুলে বাঁধো।
♦
* ট্রিসিয়া– আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের কন্যা।
♥
আমি যে হাতে তোমাকে ছুঁই–,
সেই হাতে মাটিকেও
কোনোদিন স্পর্শ করি না।
♥
এখন জমতে দাও ঘাসে-ঘাসে, পত্রপুষ্পে শিশিরের কণা।
যে-ডাল ফুলের ভারে
কলির বৈভবে নত হতে চায়–
হোক, তাকে নত হতে দাও,
নাড়াবে না।
♥
বহু বেদনায় বলি, যাও। অন্য কোনো দিকে নয়, শুধু নীচে, আরও তলে– আনন্দের গোপন ভূতলে যত পারো, যাও।
যেতে যেতে সমুখে যা পাও,
চূর্ণ করো তাকে।
ভাসাও স্বর্গের লোভ-,
অপূর্ণ স্বপ্নের ক্ষোভ
পূর্ণ করো নারীর নরকে।
√
আত্মহত্যা বুকে এলে চলে যাই
গাছের নিকটে–।
যে গাছ পছন্দ করি, তার শাখা
প্রেমিকার বোনের মতন।
♥♥♥
৫ জুন ২০২২।