The news is by your side.

কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিস যেন দুর্নীতির আখড়া !

0 736

 

 

কক্সবাজার অফিস

ভবনের প্রবেশ পথ থেকে শুরু করে ছাদ পর্যন্ত পোস্টারে লেখা- দালাল ও প্রতারক নিষিদ্ধ, এদের  থেকে দূরে থাকুন। বাস্তবে দালাল ছাড়া “পাসপোর্ট ” আবেদনের ফাইল নড়ে না। সেবা গ্রহীতারা সেবার নামে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হলেও  নেই কারো মাথাব্যথা এ নিয়ে । কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের প্রতিদিনকার চিত্র এরকমই।

চলতি বছরের শুরু দিকে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কয়েকদফা অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন দালাল গ্রেফতার করে। কিছু দিন ঠিকঠাক থাকলেও ফের দলালদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে।

জানা যায়, অফিস সহকারী শাখাওয়াত হোসেন, মনির ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত অশালীন আচরণ করে তাদের জিম্মি করে রেখেছে। আর এসব অভিযোগ নিয়ে সহকারী পরিচালকের কা আর এসব অভিযোগ নিয়ে সহকারী পরিচালকের কাছে গিয়েও মিলে না সুরাহা। তিনি উল্টো কক্সবাজারের পাসপোর্ট অফিসের নিয়মনীতি সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে এক শব্দ উত্তর দিয়ে তাড়িয়ে দেন। এমন অভিযোগ অনেক সেবা প্রার্থীর।

অভিযোগের সত্যতা  মিলেছে সরজমিনে গিয়ে;  প্রতিবেদকের কাছে যা রেকর্ড হয়েছে গোপন ক্যামেরায়। পরিচয়  গোপন রেখে প্রতিবেদক সরজমিনে গিয়ে নতুন পাসপোর্ট সংক্রান্ত একটি তথ্য জানতে গেলে তিনি উত্তরে বলেন, কক্সবাজারের এসব বিষয় সম্পর্কে আমি কিছুই বুঝি না।  আপনি ১০১ নাম্বার কক্ষে  শাখাওয়াত ও মনির আছে;  ওদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন বলে এড়িয়ে যান।

জাহাঙ্গীর নামে এক আনসার সদস্য প্রতিবেদকের উপস্থিত টের পেয়ে সবাইকে সতর্ক করে দেন। পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খোদ সহকারী পরিচালক মানিক চন্দ্র দেবনাথের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় পাসপোর্ট অফিসের অফিস সহকারী কাম—কম্পিউটার শাখাওয়াত হোসেন, মনির, দালাল সাগর, দালাল জনি, আনসার জাহাঙ্গীর, মহিম ও একটি সংঘবদ্ধ দালাল চক্র পাসপোর্ট অফিসকে অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে।

অফিসের ঝাড়ুদার থেকে পিয়ন;  স্যার না ডাকলে কথাও বলতে চান না সেবা নিতে আসা মানুষদের সাথে।

কক্সবাজার মহেশখালী উপজেলার থেকে সেবা নিতে আসা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একটি পাসপোর্ট করতে দিয়েছি  ১ বছর আগে। কিন্তু পাসপোর্টটি সার্ভারে আটকে গেছে বলে কয়েক দফা ডেলিভারি ডেট পেছানো হয়। এরপর সেই সময় পেরিয়ে  ১ বছর ধরে পাসপোর্ট অফিসে ঘুরছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সহকারী পরিচালক মানিক চন্দ্রের এর কাছে গেলে তিনি বলেছেন আরেকটা নতুন পাসপোর্ট করতে।

তিনি আরো বলেন, যদি আমার নতুন পাসপোর্ট করতে হয় তাহলে সেটি ১ বছর আগে বলা হয়নি কেন? অথবা নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দেওয়ার হয়নি কেন? এখন আমি চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে পারছি না এর দায়ভার কে নিবে?

টেকনাফের দিল মোহাম্মদ তিনি জানান, অনেক কষ্টে আবেদন ফাইলটি জমা দিয়েছি। কিন্তু দালালের মাধ্যমে না করায় আমার পাসপোর্ট পেতে বিড়ম্বনা শিকার হতে হচ্ছে। ২১ দিনের জায়গায় ৪ মাস ধরে পাসপোর্টের জন্য এ দুয়ার থেকে ওই দুয়ার ঘুরছি।

রামু থেকে সোহান নামে আরেক যুবক জানান, সকালের দিকে আনসার ও সেখানে কয়েকজন কর্মকর্তাদের যারা টাকা দিয়েছেন, তাদের সকাল সকল ফাইল ও ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়ার ব্যবস্থা  হয়ে গেছে। কিন্তু আমি দালাল এর মাধ্যমে না যাওয়ায় আমার ফাইলে জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর দুটাই কনফার্ম দিয়েছি বলে আমার ফাইলটি গ্রহণ করেনি। সোহান আরও জানান, এখানে এসে যা বুঝতে পারলাম চুক্তি না করে হাজার ঘুরেও ফাইল জমা ও ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়া হবে না।

টেকনাফ থেকে আসা নামে প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ভুক্তভোগী জানান, সকালে পাসপোর্টের জন্য আবেদন জমা দিতে এলে অফিসের গেটের এক আনসার সদস্য বলেন, কিছু টাকা দিয়ে আবেদন জমা দিয়ে চলে যান। আর টাকা না দিলে সহজে পাসপোর্ট পাওয়া যাবে না বলে পরামর্শ দেন।

সাগর নামে এক দালালকে এক ভুক্তভোগী ১০ হাজার টাকা দিয়েও কাঙ্খিত পাসপোর্ট পাননি। ওই ভুক্তভোগী একটি ভিডিও একটি গোয়েন্দা সংস্থার হাতে এসেছে। কয়েকদিন সরজমিনে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ঘুরে এমন তথ্য মিলেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অফিস সহকারী শাখাওয়াত হোসেন ও নিরাপত্তা কর্মীরা ছাড়া পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের আবেদনপত্রের ফাইল নড়ে না। তাদের সাথে রয়েছে সাঈদ, মনির, মাসুদসহ ১০ সদস্যের একটি সংঘবদ্ধ দালাল চক্র।  অফিস সহকারী শাখাওয়াত ও দালালদের মধ্যে রয়েছে সখ্য। দালাল চক্র কন্ট্রাকে পাসপোর্ট নিয়ে ফাইলের উপর একটি সংকেত চিহ্ন বসিয়ে দেওয়া হয়। আর সেই সংকেত চিহ্ন দেখেই ফাইল জমা নিয়ে নেন অফিস সহকারী শাখাওয়াত হোসেন। আর যারা সরাসরি পাসপোর্ট আবেদন ফাইল জমা দিতে যান তাদের পাসপোর্ট আটকে দেওয়ার হুমকি ধমকি ও দেন শাখাওয়াত।

পাসপোর্ট করতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক জানান, মঙ্গলবার নতুন পাসপোর্ট আবেদন ফরম নিয়ে জমা দিতে যান ১০১ নং কক্ষে তার ফাইলে সব কাগজপত্র ওকে ছিল।

কিন্তু কোন মাধ্যম ছাড়া পাসপোর্ট করতে যাওয়া আমার ফাইলটি তিন দিন ধরে ফেরত দেওয়া হয়। অবশেষে চতুর্থ দিন গেলে শাখাওয়াত ধমক দিয়ে বললো ফাইলটি আর গ্রহণ করা হবে না। নানা অজুহাত দেখি সব কাগজপত্র মূল কপি আনতে হবে বলে তাড়িয়ে দেয়। পর সেখানের এক কর্মকর্তার মাধ্যমে ১ হাজার টাকার বিনিময়ে অবশেষে আবেদন ফাইলটি জমা নেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, নতুন পাসপোর্টের আবেদন দালাল চক্র মাধ্যমে না গেলে নানা অজুহাতে জমা নেন না শাখাওয়াত। আর দালাল মধ্যমে দিলে গুনতে হয় অতিরিক্ত ৫—১০ হাজার টাকা যার একটি অংশ পৌঁছে যায় সংঘবদ্ধ দালাল চক্র মাধ্যমে অফিস কর্মকর্তাদের হাতে।

আর পুরনো আর দালাল মধ্যমে দিলে গুনতে হয় অতিরিক্ত ৫—১০ হাজার টাকা যার একটি অংশ পৌঁছে যায় সংঘবদ্ধ দালাল চক্র মাধ্যমে অফিস কর্মকর্তাদের হাতে। আর পুরনো পাসপোর্ট রিনিউ করতে লাগে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। এদিকে পরিচয় গোপন সাইদ নামে এক দালালের সঙ্গে একটি নতুন পাসপোর্ট করে দেওয়া নিয়ে কথা হয়।

তিনি জানান, সরকারি নির্ধারিত ফি জমা দেওয়ার পর তাকে দিতে তাকে দিতে হবে। ৫ হাজার টাকা এতে ১ সপ্তাহের মধ্যে মিলবে ভোগান্তি ছাড়া পাসপোর্ট। এসব অভিযোগের বিষয়ে সোমবার কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মানিক চন্দ্রে ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার শাখাওয়াত হোসেন ও মনিরের মুঠোয় ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ চেষ্টা করেও তারা কেউ ফোন রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ ভিশননিউজ ২৪কে বলেন, বিষয়টি উদ্বেগজনক। সেবার বিনিময়ে কেউ টাকা নিয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নেওয়া হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.