কক্সবাজারে কিশোর গ্যাং দৌরাত্ম্য, আতঙ্কে শহরবাসি
কক্সবাজার অফিস
পর্যটন শহর কক্সবাজার শহর ও শহরতলীর আশেপাশে দিন দিন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। স্কুল—কলেজের গন্ডি পেরোনোর আগেই তরুণদের একটি অংশ শহরে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের কারণে প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে স্কুল—কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীসহ বিভিন্ন বয়সের নারী।
গতবছর বেশ কয়েকজন কিশোর গ্যাং লিডার ও সদস্য গ্রেফতার হলেও সম্প্রতি তাদের দৌরাত্ম্য মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে, গোলদীঘির পাড়, বাজারঘাটা নাপিতা পুকুর পাড়, লালদীঘি পাড় ও শহরের অলিগলিতে চায়ের দোকান বা বিশেষ কিছু স্থানে অবস্থান নেয় কিশোর গ্যাং। প্রতিনিয়ত সংগঠিত হচ্ছে নানা অপরাধ। নারীদের শ্লীলতাহানি , মোটরসাইকেল ছিনতাই, ইয়াবা ছিনতাই, খুচরা ইয়াবা বিক্রি ও সেবন, জিম্মি রেখে টাকা আদায়সহ ভয়ংকর সব অপরাধ করে বেড়ায় কিশোর গ্যাং বা সন্ত্রাসী গ্রুপ।
৩ জুলাই কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন থেকে পুলিশ পাহারায় ঘরে ফেরার পথে তাদের সামনেই ফয়সাল উদ্দিন (২৩) নামের এক ছাত্রলীগ নেতাকে সন্ত্রাসীরা খুন করে। তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ডেইলপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। অন্যদিক ২১ জুলাই রাত সাড়ে ৯ টার দিকে কক্সবাজার শহরের পেশকার পাড়া সংলগ্ন বাঁকখালী নদীর সিকো বরফ কল পয়েন্টে প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হন ইমন হাসান মওলা। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে আশঙ্কাজনকভাবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৩টার দিকে মারা যান ইমন। সে পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উত্তর টেকপাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাছানের ছেলে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সরকারি মহিলা কলেজ, সৈকত বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, পৌর প্রিপারেটরি উচ্চবিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান জামে মসজিদ, গোলদীঘির পশ্চিম পাড়ে, বাহারছড়ার বিভিন্ন স্থানে, বৌদ্ধমন্দির, বার্মিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে, ভোলা বাবুর পেট্রল পাম্পের পূর্বপাশে মইত্যার দোকানে, বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমি, কালুর দোকান, পাহাড়তলী রাস্তার মাথায়, কচ্ছপিয়া পুকুরের পাড়ে, টেকপাড়ার বিভিন্ন অলিগলি, পিটি স্কুল গেট, হাশেমিয়া মাদ্রাসা ও সিটি কলেজ গেটে বখাটের দৌরাত্ম্য বেশি। এসব স্থানে জটলা করে সব সময় আড্ডা চলে এসব বখাটেদের। শহরের প্রতিটি এলাকার ও প্রতিটি অলিগলির প্রতিটি কিশোর গ্যাংয়ের সাথেও একে—অপরের রয়েছে নিবিড় যোগাযোগ। এদের অনেকেই চাঁদাবাজি ও ইয়াবা ব্যবসার মাধ্যমে রাতারাতি ‘আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ’ হয়ে উঠেছে।
পুলিশের অভিযানের কারণে শহরের কতিপয় শীর্ষ কিশোর গ্যাংয়ের লিডাররা গা ঢাকা দিলেও কক্সবাজারে সিনহা হত্যাকান্ডের পর পুলিশের ব্যাপক রদবদলের আবারো এলাকায় ফিরে নানা রকম অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। যার বেশি ভাগ পরিলক্ষিত হচ্ছে- সার্কিট হাউজ সড়ক, কেন্দ্রীয় ঈদগাঁহ ময়দান, হাসপাতাল সড়ক,মোহাজের পাড়া,ঘোনাপাড়া এলাকায়, বৈদ্যঘোনা খাজ্জা মঞ্জিল এলাকায়,আলমগীর টাওয়ার এলাকায়, গোলদীঘির পাড় সহ এর আশেপাশের এলাকায় ঘাপটি মেরে বসে অপরাধকর্ম নিয়ন্ত্রণ করছে।
রাজনৈতিক দলের ভাইদের প্রভাব বিস্তার করতে তারা পারে না এমন কোন কাজ নাই। কিশোর গ্যাংয়ের কিশোররা সংঘবদ্ধ হওয়ায় অনেকেই মনে করেন, এদের পেছনে কোনো গডফাদার বা প্রভাবশালী কেউ রয়েছে। ফলে কেউ এদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পান না।
স্থানীয়রা জানান, এমন কোন স্থান নেই যেখানে বখাটের উৎপাত নেই। আগে তারা ইভটিজিং এবং কিছু ছিঁচকে অপরাধের সাথে যুক্ত ছিল। কিন্তু কিশোর গ্যাং কালচার নাম দিয়ে এখন তারা ইয়াবা বিক্রি, পাচার, সেবনে জড়িয়ে পড়েছে। অনেক কিশোর গ্যাং দিনদুপুরে মোটরসাইকেল ছিনতাই করছে। খুনোখুনিতেও জড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
বাংলাদেশ মানবাধিকার ফোরাম কক্সবাজার জেলার আহবায়ক এডভোকেট সেজান এহসান বলেন, কিশোর গ্যাং কালচার নাম দিয়ে এখন তারা ইয়াবা বিক্রি, পাচার, সেবনে জড়িয়ে পড়েছে। অনেক কিশোর গ্যাং দিনদুপুরে মোটরসাইকেল ছিনতাই করছে। খুনোখুনিতেও জড়িয়ে যাচ্ছে। এমন কোন স্থান নেই যেখানে বখাটের উৎপাত নাই। তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কিশোর গ্যাং কালচার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি ।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম জানান, কিশোর গ্যাং কালচার বন্ধে জেলা পুলিশ তৎপর রয়েছে। প্রতিনিয়ত জেলায় অপরাধ নির্মূলের জন্য জেলা পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।