কক্সবাজার অফিস
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আড়ালে সক্রিয় হয়ে উঠছে জামায়াত—শিবির। রাজনীতির মাঠে ফিরছে নাশকতা মামলার আসামিরা।
জানা যায়, নাশকতার পরিকল্পনায় নানা কৌশলে একের পর এক গোপন বৈঠক বসছে । দীর্ঘদিন মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় নয়- জামায়াতে ইসলামী। ইস্যুকেন্দ্রিক; গণমাধ্যমে কিছু বিবৃতি পাঠানো, আর মাঝেমধ্যে ঝটিকা মিছিল করা ছাড়া তেমন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই বললেই চলে। এই অস্বাভাবিক নীরবতায় দলটির রাজনীতি কার্যত শেষ হয়ে গেছে বলে অনেকে মনে করছেন। তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।
সূত্র বলছে, সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্যের পথে হাঁটা বিএনপিসহ রাজপথের বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে ‘যুগপৎ’ আন্দোলনে নিজেদের সক্রিয় করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী দলটি। এ লক্ষ্যে রাজনীতির মাঠে কোণঠাসা দলটি উপরে নীরব থাকলেও গোপনে বিভিন্ন অভিনব কৌশলে চলছে তাদের সাংগঠনিক শক্তি সঞ্চয়ের কাজ। ভিন্ন কৌশলে রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিসহ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যখন নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে উঠছে, জোটসঙ্গী জামায়াতের রাজপথে কর্মসূচি বাড়ানোর বিষয়টিতে আলাদা নজর রাখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
জামায়াত—শিবিরের নেতা—কর্মীরা নানা ইস্যুতে ইদানীং রাজপথে নামছেন। পণ্যমূল্যের ইস্যুতে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেন জামায়াত—শিবিরের নেতা—কর্মীরা। রাজনীতির মাঠে ফিরছেন একাধিক মামলা মাথায় নিয়ে দীর্ঘদিন পলাতক ও আত্মগোপনে থাকা শীর্ষ নেতারা।
এক দশক ধরে দলটির কক্সবাজারের কার্যালয়ে জেলার শীর্ষ নেতাদের দেখা মিলেনি বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এমনকি জেলা জামায়াতের কার্যালয়টি খন্ড খন্ড করে প্রেস, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন স্টোর হিসেবে ৫টি দোকান করে বরাদ্দ দিয়ে মাসিক ভাড়া দিয়ে দিয়েছে বলে জানান একাধিক ব্যবসায়ী। এদিকে জামায়াত শিবিরের কোন প্রকাশ্যে সভা—সমাবেশ না করলেও ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জামায়াত—শিবির সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়াতে অনলাইনে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে ব্যাপক ভাবে। জেলায় জামায়াত—শিবিরের রাজনৈতিক কার্যক্রম চলছে— হোয়াটস অ্যাপ, ভাইবার, মেসেঞ্জারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কর্মীদের সঙ্গে সাংগঠনিক যোগাযোগ রাখছেন নেতারা। সুযোগ পেলেই তারা বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন। অনলাইন লাইব্রেরির মাধ্যমে সংগঠনের আদর্শ প্রচার করছেন।
জেলা শহরে জামায়াত শিবিরের অন্তত শতাধিক ছাত্রাবাস রয়েছে। রয়েছে একাধিক হোটেল গেস্ট হাউস সহ নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। জামায়াত শিবিরের নিয়ন্ত্রিত ছাত্রাবাস ও তাদের বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গুলোতে গোপনে কার্যক্রম চালাচ্ছে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত এই দলটি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়- শহরের টেকপাড়া, ইসুলোরঘোনা, পিটিআই স্কুল, কালুর দোকান, কলাতলী, বাসটার্মিনাল এলাকা, বাহারছাড়াসহ পৌর এলাকার বিভিন্ন ব্যাচেলর বাসা বাড়িতে শিবিরের কর্মীরা সক্রিয় হচ্ছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া জামায়াতে ইসলামী নিয়ন্ত্রিত জেলা শহরের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলে জামায়াত নেতাকর্মীদের গোপন বৈঠক।
এবিষয়ে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেন বলেন, পুলিশের চোখ এড়িয়ে বিভিন্ন মেচ ও ব্যাচেলর বাড়া বাসার থাকার আড়ালে শিবির ক্যাডারদের সক্রিয় অবস্থান আইন—শৃঙ্খলার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তারা যে কোনো মুহূর্তে সংঘটিত হয়ে নাশকতামূলক কর্মকান্ড ঘটাতে পারে।
অভিযোগ উঠেছে চিহ্নিত জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মী কিংবা সমর্থকরা ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় স্বার্থান্বেষী নেতার পৃষ্ঠপোষকতায় সমাজের বিভিন্ন স্তরে নিজেদের প্রভাব বলয় তৈরি করছেন। তারা কৌশল হিসেবে বিভিন্ন সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তুলার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমর্থনেও কথা বলছেন। জামায়াত শিবির নিজেদের নিরাপদ রাখতে এবং নির্বিঘ্নে তাদের মধ্যে যোগাযোগ ও দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যেতেই এ কৌশল বেছে নিয়েছেন।
জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি অন্তিক চক্রবর্তী বলেন, জামায়াত শিবির নেতাকর্মীরা জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে ভোল পাল্টে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে নিজেদের অবস্থান সুরক্ষিত করছেন। নিবন্ধন বাতিল হলেও তাদের অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসা—বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়নি। ফলে এ অঞ্চলে জামায়াত—শিবিরের আর্থিক সরবরাহ অব্যাহত আছে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে এবং বিভিন্ন সময় কক্সবাজারে ব্যাপক নাশকতা, পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর, জ্বালাও—পোড়াওসহ বিভিন্ন মামলায় জামায়াত—শিবিরের নেতারা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকায় দলীয় কার্যক্রম অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছিল। পরবর্তীতে জামায়াত—শিবিরের ক্যাডার ও নেতাকর্মীরা জামিনে বের হয়ে সংগঠন গোছাতে নতুন করে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তবে জামায়ত শিবির কর্মীরা মাঠে নামতে না পারলেও নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্য দিয়ে নিজেদের সক্রিয় রেখেছেন বলে জানান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একাধিক সদস্য।
এ বিষয়ে কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি নজিবুল ইসলাম বলেন, জামায়াত—শিবির সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। তারা ১৫ আগস্ট, ১৭ আগস্ট ও ২১ আগস্টসহ সকল নারকীয় হামলা ও হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বধানকারী আওয়ামী লীগ যখন দেশকে উন্নয়নের সবোর্চ্চ চূড়ায় নিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনি ৭১ এর পরাজিত শক্তির দৌরাত্ম্য বাড়ছে। তবে দেশের মানুষ এখন তাদের সব নীল নকশা বুঝে গেছে। তাই তাদের আর কেউ বিশ্বাস করে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকেরা দেহের শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও তাদের সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) সেলিম উদ্দিন জানান, পুলিশ সুপারের নির্দেশে নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াত—শিবিরের অপতৎপরতা মোকাবেলায় পুলিশ সবসময় সতর্ক রয়েছে। দিন—রাত নিরলসভাবে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সেই সাথে মাঠ পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি।