নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ সালে। সে সময় এই পরীক্ষার নাম ‘মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি)’ হিসেবেই অপরিবর্তিত থাকছে। তবে বদলে যাচ্ছে পরীক্ষার ধরন। লিখিত ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন মিলিয়ে মোট সময় হতে পারে পাঁচ ঘণ্টা।
পরীক্ষার নাম ও মূল্যায়ন পদ্ধতি ঠিক করতে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর আগে পরীক্ষা পদ্ধতির খসড়া প্রস্তুত করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। গত ২২ এপ্রিল এনসিটিবির বৈঠকে ওই খসড়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় পরীক্ষার নাম অপরিবর্তিত রাখার বিষয়ে মতামত দিয়েছেন কমিটির সদস্যরা।
কমিটির নেতৃত্বে থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মোহাম্মদ খালেদ রহীম বলেন, ‘খসড়াটি এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।
তবে দ্রুতই মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আশা করছি।’
খসড়া অনুযায়ী, এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে দুটি ধাপে। প্রথম ধাপে কার্যক্রমভিত্তিক পরীক্ষায় অংশ নেবে পরীক্ষার্থীরা। সেখানে তারা নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর হাতে-কলমে কাজ করে তাদের পারদর্শিতা দেখাবে।
সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা এই কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এরপর ওই কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজন অনুযায়ী এক বা দেড় বা দুই ঘণ্টাব্যাপী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেবে। অর্থাৎ এসএসসি পরীক্ষা নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত চলতে পারে।
এনসিটিবির শিক্ষাক্রম সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান জানান, দুই ধাপে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ফলে মূল্যায়নে সমতা রাখতে ওয়েটেজ (গড় গুরুত্ব) পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, দুটি পরীক্ষার মানবণ্টন সমান হবে, যেন তাদের গড় করে চূড়ান্ত মূল্যায়নে কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকে। অ্যাক্টিভিটিজ (কার্যক্রমভিত্তিক পরীক্ষা) ও রাইটিংয়ের (লিখিত পরীক্ষা) জন্য ওয়েটেজ হবে ৫০ শতাংশ করে।
পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার বিষয়ে অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, কার্যক্রমভিত্তিক ও লিখিত পরীক্ষার বিষয়বস্তু কী হবে এবং কিভাবে পরীক্ষা নিতে হবে, তা পরীক্ষার দিন সকালে পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হবে।
পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সূত্রে জানা যায়, শুধু এসএসসি নয়, অন্যান্য শ্রেণিতেও শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে পরিবর্তন আসবে। পাঁচ দিনের পরিবর্তে এক দিনে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। এনসিটিবির ওয়েবসাইটে অ্যাসেসমেন্ট টুল (মূল্যায়ন পদ্ধতি) দেওয়া হতো। সেটি অনুসরণ করে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পাঁচ দিনব্যাপী অ্যাসেসমেন্ট (মূল্যায়ন) কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার বিষয়ে ধারণা দেওয়া হতো।
দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ দিন পর্যন্ত তাদের রুটিন অনুযায়ী কার্যক্রমভিত্তিক কাজ দেওয়া হতো। সর্বশেষ পঞ্চম দিনে তাদের চূড়ান্ত মূল্যায়ন করা হতো। এখন থেকে এনসিটিবির ওয়েবসাইটে মূল্যায়ন টুলস না দিয়ে পরীক্ষার দিন সরাসরি বিদ্যালয়গুলোতে তা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সকালে শিক্ষকরা তা দেখতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী সেদিনই চূড়ান্ত মূল্যায়ন করতে হবে। ফলে আগে শিক্ষার্থীরা ইউটিউব বা অনলাইন থেকে দেখে দেখে যে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিত, সেই সুযোগ আর থাকছে না।