ভারতের কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের পরিচয় ও খুনের রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
হত্যা মিশনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি ছয়জনের মধ্যে মূল পরিকল্পনাকারী (মাস্টারমাইন্ড) হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন আক্তারুজ্জামান শাহীন। শাহীনকে নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা কৌতূহল। তিনি আনারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র শহিদুল ইসলাম সেলিমের আপন ছোট ভাই। অগাধ বিত্তের মালিক শাহীন এলাকায় সবার কাছে এক রহস্য চরিত্র।
ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে বিরোধের জেরে বেয়াই সৈয়দ আমানুল্লাহকে নিয়ে শাহীন কলকাতায় আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়েই তিনি ভারতে যান। আনারের বিরুদ্ধে থাকা আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন শাহীন এবং আমানুল্লাহ। কলকাতার ব্যারাকপুরের যে ফ্ল্যাটে আনারকে হত্যা করা হয়, সেটির মালিক শাহীন। মিশন সফল করার পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে দেশে ফিরে গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁর বেয়াই সৈয়দ আমানুল্লাহ। আমানুল্লাহর বাড়ি খুলনার ফুলতলা এলাকায়।
শাহীনের তিন ভাই ও দুই বোন। মেজো ভাই প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্রে থিতু হওয়ার পর শাহীনকে নিয়ে যান। এর পরই অপরাধ জগতে প্রবেশ করেন শাহীন। যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও নিয়মিত দেশে আসতেন। এক পর্যায়ে জড়িয়ে পড়েন চোরাচালানে। অবৈধ এ ব্যবসার জোরে বাংলাদেশ ও ভারতে গড়ে তোলেন সাম্রাজ্য। শাহীন কোটচাঁদপুরের গ্রামের বাড়িতে গড়েছেন বিশাল বাগানবাড়ি। সুউচ্চ প্রাচীরঘেরা ও সার্বক্ষণিক কড়া পাহারায় থাকা বাড়িতে প্রায়ই অতিথি হয়ে আসেন পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তাসহ অনেকে।
শাহীন নিজেই এলাকায় সালিশ-দরবার করতেন। সেখানে তাঁর রায়ই চূড়ান্ত হতো। কেউ বিরোধিতা করলে পুলিশ দিয়ে তাঁকে হয়রানি করার অভিযোগও রয়েছে। তবে শাহীন এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে থানা-পুলিশে অভিযোগ দিয়ে লাভ হতো না।
কোটচাঁদপুর এলাকার বেশ কয়েকজন জানান, শাহীন গত দেড় দশকে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এসব সম্পদের উৎস বা তাঁর বৈধ ব্যবসা কী, সে সম্পর্কে কেউই কিছু বলতে পারেননি। অবশ্য এলাকায় দু’হাতে তিনি পয়সা খরচ করেন বলেও জানান অনেকে। এলাঙ্গী এলাকার খাইরুল ইসলাম বলেন, শাহীন যেভাবে দু’হাতে টাকা বিলান, তাতে শতকোটি টাকার মালিক ছাড়া সম্ভব নয়।
স্থানীয়রা জানান, এমপি আনার খুনে শাহীনের নাম উঠে আসায় অবাক হননি তারা। কারণ কোটচাঁদপুরে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের স্ট্যান্ড দখল নিয়ে বছর তিনেক আগে তাঁর অনুসারীরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পরে শাহীনের নামে অভিযোগ হলেও সহজে পার পেয়ে যান তিনি। অবশ্য কোটচাঁদপুর থানা সূত্র জানায়, আখতারুজ্জামান শাহীনের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা নেই।
কলকাতার ব্যারাকপুর এলাকার একটি সূত্র জানায়, চোরাচালান ও অপরাধ জগতের কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনা করতে শাহীন ব্যারাকপুর এলাকার সঞ্জীবনী গার্ডেনে বেনামে একটি ফ্ল্যাট কেনেন। ফ্ল্যাটের মালিক হিসেবে ঘনিষ্ঠ সন্দ্বীপ রায়ের নাম ব্যবহার করেন তিনি।