বাবা বলি অভিনেতা। মা নৃত্যশিল্পী। শৈশব থেকেই আলোর রোশনাইয়ের সঙ্গে পরিচিতি হয়ে গিয়েছিল কবীর বেদীর কন্যা পূজা বেদীর।
নব্বইয়ের দশক থেকে একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় শুরু করেন পূজা। তবে তার পাশাপাশি বিজ্ঞাপন এবং বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচারের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি।
ইন্ডাস্ট্রিতে আসার পর বলিপাড়ার এক জনপ্রিয় প্রযোজক-অভিনেতার সঙ্গে নাম জড়িয়ে পড়েছিল পূজার। ১৯৯৩ সালে আদিত্য পাঞ্চোলির সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন অভিনেত্রী।
১৯৮৬ সালে জ়ারিনা ওয়াহাবকে বিয়ে করেন আদিত্য। বিয়ের চার বছর পর জ়ারিনার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হতে শুরু করে আদিত্যের। সেই সময় পূজার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ান অভিনেতা। নিয়মিত পূজার বাড়িতে যেতেন তিনি। কিন্তু তাঁদের সম্পর্কের কথা গোপন রেখেছিলেন দু’জনে।
পূজা এবং আদিত্যের কথা জানাজানি হয়, যখন অভিনেত্রীর পরিচারিকা আদিত্যের বিষয়ে গোপন কথা ভাগ করে নেন। এক সাক্ষাৎকারে পূজা তাঁর পুরনো সম্পর্ক নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছিলেন।
পূজা বলেন, ‘‘এক দিন আমার বাড়ির পরিচারিকার সঙ্গে গল্প করছিলাম। ওর গলায় কিসের দাগ হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। আমি মজা করেই বলছিলাম যে ওর প্রেমিকের দেওয়া ভালবাসার চিহ্ন ওগুলো।’’
আবার কিছু দিন পর নাবালিকা পরিচারিকার সঙ্গে একই বিষয় নিয়ে আলোচনা উঠতে পরিচারিকা দাবি করেন, তাঁর প্রেমিককে খুব ভাল করে চেনেন পূজা। কথা প্রসঙ্গে আদিত্যের নাম আসে। পরিচারিকা জানান, পূজার অবর্তমানে নাকি তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন আদিত্য।
পূজা সাক্ষাৎকারে জানান, তাঁর সঙ্গে আদিত্য মাঝে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি জানতেন না যে তাঁর অবর্তমানে পূজার পরিচারিকার সঙ্গে দেখা করতে যেতেন আদিত্য।
পূজার পরিচারিকার দাবি, আদিত্য তাঁকে অভিনয়ে নামানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন। অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নেওয়ার ক্লাসের সমস্ত খরচ দিতেও নাকি রাজি ছিলেন অভিনেতা।
আদিত্যের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক ছিল বলেও দাবি করেন পূজার নাবালিকা পরিচারিকা। সমস্ত শোনার পর আদিত্যকে সে বিষয়ে সরাসরি প্রশ্ন করেন পূজা। পূজার দাবি, আদিত্য সব কিছু স্বীকার করেন। এর পরেই সম্পর্কে ইতি টানেন পূজা।
নিজের কর্মজীবন নিয়েও বিতর্কে জড়ান পূজা। ১৯৯১ সালে কন্ডোমের একটি বিজ্ঞাপন শুট করতে গোয়া যান পূজা। মডেল মার্ক রবিনসনের সঙ্গে সেই বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেছিলেন পূজা।
কিন্তু যে টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করা হয়েছিল, সেই চ্যানেলের তরফে বিজ্ঞাপনটির উপর নিষেধাজ্ঞা আনা হয়। অভিযোগের আঙুল ওঠে পূজার দিকে।
এক সাক্ষাৎকারে ওই বিজ্ঞাপনের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে পূজা বলেন, ‘‘আমি জানতাম শাওয়ারের তলায় আমার একার স্নান করার দৃশ্য শুট করা হবে। শুটিং সেটে পৌঁছে দেখি ওখানে মার্কও রয়েছেন। তার পর আমায় বিকিনি পরে মার্কের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করতে বলা হয় যার সম্পর্কে আমি আগে থেকে অবগত ছিলাম না।’’
আদিত্যের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর একাধিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন পূজা। গৃহসজ্জাশিল্পী ফারহান ফার্নিচারওয়ালার সঙ্গে সাড়ে তিন বছর সম্পর্কে ছিলেন পূজা। ১৯৯৪ সালের ৬ মে ফারহান এবং পূজার বিয়ে হয়। বিয়ের পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন অভিনেত্রী। দুই সন্তানের জন্মও দেন তিনি।
১২ বছর একসঙ্গে থাকার পর ফারহানের সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করে পূজার। শেষ পর্যন্ত ২০০৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রেমদিবসে খাতায়কলমে সম্পর্কে ইতি টানেন তাঁরা।
২০০৭ সালে নাচের একটি রিয়্যালিটি শোয়ে প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন পূজা। সেখানে তাঁর আলাপ হয় হানিফ হিলালের সঙ্গে। পূজার কোরিয়োগ্রাফার ছিলেন হানিফ। কয়েক বছর একে অপরকে ডেট করেছিলেন পূজা এবং হানিফ।
কিন্তু হানিফের সঙ্গে পূজার সম্পর্ক পরিণতি পায়নি। পূজা এক সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘আমরা একে অপরকে জীবনসঙ্গী হিসাবে চাইতাম না। বহু দিন সময় কাটিয়ে আমরা তা বুঝতে পেরে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’’
হানিফের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর দ্বিতি বিক্রমাদিত্যের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান পূজা। ওড়িশার ভুবনেশ্বরের বাসিন্দা দ্বিতিকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পূজা। কিন্তু দ্বিতির সঙ্গেও পূজার সম্পর্ক কোনও পরিণতি পায়নি।
পূজা জানান, ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাগ্দান পর্ব সেরে ফেলার কথা ছিল অভিনেত্রীর। কিন্তু দ্বিতি নাকি তাঁর বাড়িতে পূজার কথা কখনওই জানাননি। কানাঘুষোয় দ্বিতি এবং পূজার কথা জানতে পারে দ্বিতির পরিবার। কিন্তু পূজাকে পূত্রবধু হিসাবে মেনে নিতে পারেনি দ্বিতির পরিবার। তাই তাঁদের সম্পর্কও ভেঙে যায়।
দ্বিতির সঙ্গে বিচ্ছেদের কয়েক বছর পর ‘বিগ বস্’ রিয়্যালিটি শোয়ের পঞ্চম পর্বে প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন পূজা। সেখানে অন্য এক প্রতিযোগী আকাশদীপ সহগলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান পূজা।
শো শেষ হওয়ার পরেও আকাশদীপের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন পূজা। অভিনেত্রীর নাম নিজের হাতে ট্যাটুও করিয়েছিলেন আকাশদীপ। কিন্তু ২০১৩ সালে অজানা কারণে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরেও হাতের ট্যাটু মুছে ফেলেননি আকাশদীপ। তাঁর দাবি, পূজা তাঁর জীবনে ইতিবাচক মুহূর্ত নিয়ে এসেছেন। তাই পূজার নামের ট্যাটু মুছে ফেলতে চান না। ২০১৭ সালে পূজার ৪৭তম জন্মদিনেও একসঙ্গে অভিনেত্রীর সঙ্গে সময় কাটিয়েছিলেন আকাশদীপ। ২০১৯ সালে মানেক কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে আংটিবদল সারেন পূজা।