তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা ও তেল উৎপাদন কমানো নিয়ে আরব বিশ্বের প্রতি দেশটির বৈরী মনোভাবের মধ্যেই বাদশাহ সালমানের আমন্ত্রণে তিন দিনের সফরে সৌদি আরবে রয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এই সফরে দুই দেশের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলারের চুক্তি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে শুধু বাণিজ্য চুক্তিই নয়, ভূরাজনৈতিক নানা সমীকরণেও এই সফরের বেশ গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্নেষকরা।
গতকাল বুধবার শুরু হওয়া জিনপিংয়ের রাষ্ট্রীয় সফর ঘিরে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ সেজেছে চীনা ও সৌদির পতাকায়। পত্রিকাগুলোর প্রথম পাতায় স্থান পায় জিনপিংয়ের আগমন, অর্থনৈতিক সুবিধাসহ নানা বিষয়। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন সৌদি আরবের তেলের শীর্ষ গ্রাহক। উভয় পক্ষই অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং ভূরাজনৈতিক পুনর্গঠনের সময় তাঁদের সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায়।
করোনাভাইরাস শুরুর পর থেকে জিনপিংয়ের তৃতীয় বিদেশ সফর এটি। ২০১৬ সালের পর সৌদি আরব সফর করেননি চীনা নেতা। অবশ্য, গত জুলাইয়ে সৌদি সফর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ওই সফরে তিনি তেল উৎপাদন বাড়াতে বললেও কথা রাখেনি শীর্ষ তেল উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের জোট ওপেক প্লাস। এই জোটের অন্যতম সদস্য রাশিয়া। যে কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা ২০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কম করার সিদ্ধান্তকে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার সমর্থক বলে সৌদির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিল। সেই থেকে সৌদি আরবের টানাপোড়েন চলছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে।
জিনপিংয়ের এই সফরে আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকবে তেলের বাজার। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে তেলের বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। জি৭ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত শুক্রবার রাশিয়ান তেলের দাম কমিয়ে ব্যারেলপ্রতি সর্বোচ্চ ৬০ ডলার নির্ধারণ করেছে, যা বাজারে আরও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।
সফরে সৌদি বাদশাহ সালমান এবং ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পাশাপাশি ছয় সদস্যের উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ এবং অন্তত ১৪টি আরব দেশের প্রধান ও চীনের মধ্যে শীর্ষ সম্মেলন হবে রিয়াদে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং গতকাল বলেছেন, এসব কর্মসূচি গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত চীন ও আরব বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, ২০০৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আরব বিশ্বে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে চীন, এর মধ্যে ২০ শতাংশেরও বেশি হয়েছে শুধু সৌদিতেই।
সরকারের ঘনিষ্ঠ সৌদি বিশ্নেষক আলি শিহাবি বলেছেন, বেশ কয়েকটি চুক্তি সই হবে। তেল ছাড়াও সৌদি অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করতে যুবরাজ সালমানের পরিকল্পনায় থাকা মেগা প্রকল্পগুলোতে আরও ব্যাপকভাবে যুক্ত হতে আলোচনা করতে পারে দুই দেশ। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ৫ হাজার কোটি ডলারের মেগাসিটি যা ‘নিয়ম’ নামে পরিচিত। এই মেগাসিটিকে জ্ঞানের শহর বলা হচ্ছে। যা নজরদারি প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করবে। চীন ও সৌদি আরব অস্ত্র বিক্রি ও উৎপাদনে একসঙ্গে কাজ করছে। সৌদির সঙ্গে সম্পর্কের কিছুটা অবনতি হওয়ায় এখন জিনপিংয়ের এই সফরকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পশ্চিমা দেশের সঙ্গে সম্পর্কের দোটানার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে বেইজিংয়ের পরিকল্পনার মধ্যেই এ সফর হচ্ছে।