তসলিমা নাসরিন
হাস্যজ্জ্বল নীতু সিং এখন সর্বত্র বিরাজমান। টিভিতে, দৈনিকে, সাপ্তাহিকে, টুইটারে, ফেসবুকে, ইন্সটাগ্রামে, পাপারাৎসির ক্যামেরায়, মুভিতে, পার্টিতে। ঋষি কাপুর বেঁচে থাকাকালীন তাঁকে কিন্তু এত দেখা যায়নি। পাবলিক ভুলেই গিয়েছিল নীতু সিং–কে। এখন যেন গ্রীক রূপকথার ফিনিক্স পাখির মতো, নিজের পোড়া ছাই থেকে তিনি নতুন করে জন্ম নিয়েছেন । পুরুষের সাফল্যের পেছনে থাকে একজন নারী। একজন নারীর সাফল্যের পেছনে থাকে ডিভোর্স অথবা বৈধব্য।
কত মেয়েকে যে আপোস করে স্বামীর সঙ্গে বাস করতে হয়! কোনও শ্রেণী নেই এর। সব শ্রেণীর মেয়েরাই আপোস করে। করতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশের নায়িকা পরীমণি কিছুদিন আগে ঘোষণা করেছিলেন, তিনি তাঁর স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন, যেহেতু স্বামী তাঁকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করেন, এই অসুস্থ সম্পর্ক তিনি আর কিছুতেই রাখবেন না।
এর পরই, আমার অনুমান, সমাজের চারদিক থেকে তাঁকে আপোস করার জন্য চাপ দেওয়া হলো। মূর্খদের ভ্রূকুটি বিদ্রুপ তো সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। অগত্যা তিনি আপোস করলেন, এবং ডিভোর্সের ঘোষণা ফেসবুক থেকে ডিলিট করে দিলেন।
আবারও সেই লোকের সঙ্গে তিনি দাম্পত্যজীবন শুরু করলেন, যাঁকে ত্যাগ করার কড়া সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছিলেন। তিনি এখন একা একা মানসিক নির্যাতন সহ্য করবেন, শারীরিক নির্যাতন সহ্য করবেন এবং রক্তাক্ত হতে থাকবেন ভেতরে বাইরে। তবু মুখ ফুটে কিছু বলবেন না কাউকে। লক্ষ কোটি বোবা মেয়ের মতোই হয়ে উঠবেন তিনি। তাঁর স্বামীর সাফল্যের পেছনে থাকবেন তিনি আর তাঁর সাফল্যের জন্য অপেক্ষা করতে হবে কবে তিনি একলা হবেন— তার। এর ব্যতিক্রম যে ঘটতে পারে না, তা নয়।