তসলিমা নাসরিন
আর ভালো লাগছে না করোনা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে। যা হবার হবে। আমেরিকার লক ডাউন ভেঙ্গে প্রচুর মানুষ পথে নামছে। সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং কেউ আর মানছে না। পুলিশি বর্বরতার প্রতিবাদ করা জরুরি আবার ভাইরাস থেকে বাঁচাটাও জরুরি। একটি করলে আরেকটি হয় না। জানি না পৃথিবী কোনদিকে যাচ্ছে। ভারতে ভেবেছিলাম করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা কমবে, এখানেও ভয়ংকর বাড়ছে। কোনও কোনও বিজ্ঞানী বলছেন, জুলাইয়ের শেষদিকে ভারতের ৬৫ কোটি লোকের শরীরে করোনা ঢুকবে। ভ্যাক্সিন হয়তো আসবে, কিন্তু করোনা রয়ে যাবে। করোনার সংগে যুদ্ধ করে যারা বাঁচার তারা বাঁচবে, যারা মরার, তারা মরবে। এই সত্যটি মেনে নিলে দুশ্চিন্তা, হতাশা, ভয় ইত্যাদি কম হয়।
কমই হচ্ছে কিন্তু টেলিভিশন দেখতে গেলেই আবার হতাশারা উড়ে আসে। যখন ওই সাদা পুলিশটি হাঁটু দিয়ে চেপে ধরেছিল কালো লোকটির গলা, কালো লোকটি বলছিল সে শ্বাস নিতে পারছে না, তারপরও সাদা পুলিশটি হাঁটু সরাচ্ছে না, দেখছিলাম আর আমার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। সত্যি শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যেন আমারই শ্বাসনালীতে চাপ পড়ছে। পরিযায়ী শ্রমিকেরা যখন হাজার কিলোমিটার হাঁটছিল, মনে হচ্ছিল আমিই বোধহয় পেটে ক্ষিধে নিয়ে হাঁটছি, মাথায় ভারি বোঝা নিয়ে হাঁটছি, আমার চপ্পলের বোধহয় ফিতে ছিঁড়ে গেছে। কিন্তু হাঁটছি, হন হন করে। চপ্পল পড়ে রয়েছে পথে, আমি হাঁটছি।
আমার আর করোনার খবর দেখতে ইচ্ছে করে না আজকাল। আমার আর মানুষের কষ্ট যন্ত্রণা মৃত্যু দেখতে ইচ্ছে করে না। আমার আর হতাশায় ডুবে থাকতে ইচ্ছে করে না। যে কটাদিন জীবনের বাকি, সে কটাদিন আনন্দময় একটি জীবন যাপন করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আনন্দ কোথায় পাবো! আনন্দ নির্বাসনে গেছে। দক্ষিণ কোরিয়া লকডাউন উঠিয়ে নিয়েছিল, করোনা নতুন করে হামলা করেছে বলে ফের বন্ধ করে দিতে হয়েছে সব। জানিনা উপমহাদেশের কী হাল হবে লকডাউন উঠিয়ে নিলে।
এই পৃথিবী দিন দিন অচেনা পৃথিবী হয়ে উঠছে।