আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচি নিয়ে বিভিন্ন সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। এর মধ্যেই চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা। ফলে খেলাপি ঋণ কমাতে কঠোর হওয়ার পরিবর্তে আবার ঢালাও ছাড় দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা থাকলেও এপ্রিল-জুন সময়ে মাত্র ৫০ শতাংশ দিলে তাকে আর খেলাপি করা হবে না। গতকাল এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে কেউ মেয়াদি ঋণের প্রদেয় কিস্তির ন্যূনতম ৫০ শতাংশ পরিশোধ করলে তাঁকে আর খেলাপি করা যাবে না। স্বল্পমেয়াদি কৃষি ও ক্ষুদ্রঋণসহ গত ১ এপ্রিল অশ্রেণীকৃত ঋণের ক্ষেত্রে এ সুবিধা প্রযোজ্য হবে। কিস্তির বাকি অংশ ঋণের পূর্বনির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। কেউ নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধ না করলে যথানিয়মে খেলাপি হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, প্রকৃত সমস্যার কারণে ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় দেওয়া যেতে পারে। তাও হতে হবে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে। তা না করে করে ঢালাও ছাড় দিলে সামর্থ্য থাকলেও অনেকে ঋণ পরিশোধ করেন না।
ব্যাংকাররা জানান, দেশের এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী এমনিতেই ঋণ পরিশোধ না করতে বিভিন্ন অজুহাত খোঁজেন। এর মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর হওয়ার পরিবর্তে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর বিভিন্ন উপায় বের করে দিচ্ছে। করোনার প্রভাব শুরুর পর ২০২০ সালে ঋণ পরিশোধে অভিনব ছাড় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বছর ঢালাওভাবে ঋণ পরিশোধ না করেও খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ দেওয়া হয়। ২০২১ সালে যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা ছিল, তার মাত্র ১৫ শতাংশ দিলেই তাদের নিয়মিত দেখানো হয়। এরপর ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে একজনের যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা ছিল, তার মাত্র ৫০ শতাংশ দিলেই তাকে আর খেলাপি করা হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এ সার্কুলারের আওতায় সুবিধা পাওয়া ঋণ দেরিতে পরিশোধের জন্য কোনো ধরনের দণ্ড সুদ বা অতিরিক্ত ফি আদায় করা যাবে না। আর পুনঃতপশিলের মাধ্যমে নিয়মিত থাকা ঋণের জন্যও এ সার্কুলারের আওতায় সুবিধা নেওয়া যাবে। ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে পারবে। আর সুবিধা পাওয়া ঋণে যে পরিমাণ সুদ নগদে আদায় হবে, তা আয় খাতে স্থানান্তর করা যাবে।