রবিবার শতাধিক ড্রোন নিয়ে ইজ়রায়েলে হামলা চালিয়েছিল তেহরান। প্রায় ২০০টি ড্রোন ছোড়া হয়েছিল ইজ়রায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে। ইরানের এই হামলা যতটা তীব্র হবে বলে মনে করা হয়েছিল, ততটা হল না। ইজ়রায়েলের ভূখণ্ডে সে ভাবে দাগই কাটতে পারল না ইরানের হামলা। আকাশে তাদের ছোড়া ড্রোন ধ্বংস করে দিল ইজ়রায়েল।
ইজ়রায়েলের এই সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে তাদের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। যা আমেরিকার সাহায্য নিয়ে বছরের পর বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে তুলেছে ইজ়রায়েল। বার বার বিদেশি হামলার মুখে তাদের সাফল্য এনে দিয়েছে এই ব্যবস্থা। ইজ়রায়েলের কাছে রয়েছে অত্যাধুনিক ‘অ্যারো এরিয়াল ডিফেন্স সিস্টেম’। এর মাধ্যমে আকাশেই ইরানের ড্রোনগুলি চিহ্নিত করতে পেরেছেন সেনারা। সেগুলিকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয়েছে গুলি। ইজ়রায়েলকে আমেরিকা এবং ব্রিটেনের সেনারা এই কাজে সহায়তা করেছেন। নীচ থেকে ছোড়া গুলি আকাশপথে ভেসে আসা ড্রোনে নিখুঁত ভাবে বিঁধে গিয়েছে। অধিকাংশ ড্রোনই ইজ়রায়েলের আকাশসীমা পেরোতে পারেনি।
সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, কী ভাবে একের পর এক ইরানি ড্রোনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে ইজ়রায়েল, আমেরিকার গুলি। দেখে মনে হচ্ছে রাতের আকাশে যেন আতশবাজির খেলা শুরু হয়েছে।
আমেরিকার মিসাইল ডিফেন্স এজেন্সির সঙ্গে ইজ়রায়েলের এরোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ় যৌথ ভাবে কাজ করে ‘অ্যারো এরিয়াল ডিফেন্স সিস্টেম’ তৈরি করেছে। ইজ়রায়েলের বহুস্তরীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একেবারে উপরের স্তর হিসাবে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। ১৯৮০-র দশক থেকে এই ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজে হাত দেয় ইজ়রায়েল এবং আমেরিকা। ফলশ্রুতি হিসাবে ‘অ্যারো ১’ এবং ‘অ্যারো ২’ সিস্টেম চালু হয় পর পর।
বাইরে থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র অল্প এবং মাঝারি দূরত্বে থাকলে সে ক্ষেত্রে ‘অ্যারো ২’ সিস্টেম কার্যকরী হয়। অল্প এবং মাঝারি দূরত্বের ক্ষেপণাস্ত্রকে আকাশেই অকেজো করে দিতে পারে এই ব্যবস্থা। তবে দূরের ক্ষেপণাস্ত্রকে কাবু করতে পারে একমাত্র ‘অ্যারো ৩’, যা ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে। রবিবার ইরানের হামলা নিষ্ক্রিয় করতে সেই ‘অ্যারো ৩’ কাজে লেগেছে।
‘অ্যারো এরিয়াল ডিফেন্স সিস্টেম’ ছাড়া ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অন্য স্তরগুলি হল ‘আয়রন ডোম’ এবং ‘ডেভিডস স্লিং’। এর আগে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে ‘আয়রন ডোম’-এ সাফল্য পেয়েছিলেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
ইজ়রায়েলের ‘অ্যারো ৩ ডিফেন্স সিস্টেম’ ২০১৫ সালে প্রথম চালু হয়েছিল। একাধিক সাফল্য পেলেও ইজ়রায়েল স্বীকার করেছে, এই ব্যবস্থায় সিরিয়ার বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আটকানো যায়নি। সেখানে ব্যর্থ হয়েছে ইজ়রায়েলের প্রতিরোধ।