সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি দূতাবাসে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। সোমবারের ওই হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর শীর্ষ একজন কমান্ডার ও তার ডেপুটিসহ অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার পরপরই তেহরানের রাস্তায় বিক্ষোভে নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ। ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
হামলাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভে ফুলেফেঁপে ওঠেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিও। এই হামলার মোক্ষম জবাব দেওয়া হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন তিনি। সিরিয়ায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত হোসেন আকবরী বলেছেন, তেহরানের প্রতিক্রিয়া হবে চূড়ান্ত নিষ্পত্তিমূলক। সিরিয়ায় ইরানের ওপর এ হামলাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্য। বাড়ছে আঞ্চলিক যুদ্ধের শঙ্কা।
দীর্ঘদিন ধরেই সিরিয়ার ইরানের সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইল। তবে এই প্রথম ইরানের দূতাবাসে হামলা চালাল ইসরাইল। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান এই হামলাকে ‘সব ধরনের আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা ও চুক্তির লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে তার সামরিক অভিযানে বারবার ব্যর্থ হওয়ার ফলে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
পৃথক এক বিবৃতিতে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেছেন, ইরানের প্রতিক্রিয়া জানানোর অধিকার রয়েছে। আর এই প্রতিক্রিয়ার ধরন ও হামলার শাস্তি সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে তেহরান। জাতিসংঘে ইরানের মিশন বলেছে, এই হামলার ঘটনাটি জাতিসংঘের সনদ, আন্তর্জাতিক আইন এবং কূটনৈতিক ও কনস্যুলার চত্বর রক্ষার মূলনীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন। হামলার নিন্দা জানাতে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি মিশন সংস্থাটির নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ইরানের অন্যতম মিত্র সিরিয়া বলেছে, ইসরাইলি হামলায় নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। হামলার পরপরই ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল মেকদাদ।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা দামেস্কে ইরানের দূতাবাসের এ ভবন লক্ষ্য করে চালানো এই নৃশংস সন্ত্রাসী হামলা ও নিরপরাধ মানুষকে হত্যার তীব্র নিন্দা জানাই।‘ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের মিত্র রাশিয়াও এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে। লেবাননের ইরান-সমর্থিত শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, দামেস্কে হামলার ঘটনায় ইসরাইলকে চড়া মূল্য দিতে হবে। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ বলেছে, ‘এই অপরাধের জন্য শত্রু পক্ষকে শাস্তি পেতে হবে। অবশ্যই হামলার প্রতিশোধ নেওয়া হবে।’
ইরাক, জর্ডান, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্যান্য মুসলিম দেশও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
এদিকে গাজায়ও প্রতিনিয়ত বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি সেনারা। সোমবার দেইর-আল-বালাহতে সাহায্য করতে গিয়ে ইসরাইলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন ৭ জন ত্রাণকর্মী। গাজায় খাদ্য সরবরাহ করে ফিরে আসার পথে নিহত হন তারা। নিহত ৭ জনই মার্কিন দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে) কর্মী ছিলেন। নিহতরা অনেকে অস্ট্রেলিয়া, পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার দ্বৈত নাগরিক ছিলেন। এ ঘটনার পর গাজায় ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা করেছে সংস্থাটি। মঙ্গলবার একটি বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন অবিলম্বে অবরুদ্ধ অঞ্চলে তাদের সব কার্যক্রম বন্ধ করছে।
দাতব্য সংস্থাটি বলেছে, গাজার দেইর এল-বালাহতে ত্রাণ বিতরণের পর, ডব্লিউসিকের লোগোযুক্ত একটি ত্রাণবাহী গাড়িতে করে যাচ্ছিল নিহত দলটি। সাইপ্রাস থেকে ত্রাণ বিতরণ শেষে নিজেদের গেস্ট হাউসের দিকে যাচ্ছিল তারা। বিচ্ছিন্ন একটি সড়ক রশিদ্র স্ট্রিট ধরে যাওয়ার সময় তাদের বাহিনীর ওপর হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। সড়কটি ত্রাণকর্মীরাই ব্যবহার করে। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ত্রাণের বিষয়ে সমঝোতার পরও দলটি এই হামলার শিকার হয়েছে। সামুদ্রিক পথে গাজায় মানবিক সহায়তা পরিচালনাকারী দুটি দাতব্য সংস্থার মধ্যে একটি হলো ডব্লিউসিকে। ত্রাণকর্মীদের গাড়িতে আঘাত হানার কিছুক্ষণ আগে দলটি মেরিটাইম করিডর দিয়ে আনা ১০০ টন খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল।
এক বিবৃতিতে দাতব্য সংস্থার সিইও এরিন গোর বলেছেন, এটি কেবল ডব্লিউসিকের বিরুদ্ধে আক্রমণ নয়, এটি মানবিক সংস্থাগুলোর ওপর আক্রমণ। তবে এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ। হামলায় নিহত অস্ট্রেলিয়ার ত্রাণকর্মী লালজাওমি জোমি ফ্রাঙ্ককমের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। এ ঘটনার সম্পূর্ণ জবাবদিহিতা চাইতে অস্ট্রেলিয়ার ইসরাইলি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন আলবানিজ।