চীনকে ক্রমবর্ধমান হুমকি হিসেবে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের মিত্রদের নিয়ে চীনকে ঠেকানোর পরিকল্পনা করছে বাইডেন প্রশাসন। এ লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরে মার্কিন কংগ্রেসের কাছে বাড়তি অর্থ বরাদ্দও চেয়েছে তারা। মঙ্গলবার রাতে ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিলে সিনেট অ্যাপ্রপ্রিয়েশন কমিটির শুনানিতে এসব বিষয় উঠে এসেছে।
বাইডেন প্রশাসন মনে করে, বর্তমান বিশ্বে চীনই যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের সামরিক উপস্থিতি ও পদচিহ্ন বাড়ছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরও প্যাসিফিক অঞ্চলে এখন আরো বেশি দৃষ্টি দিচ্ছে।
শুনানিতে মার্কিন সিনেটরদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী তৃতীয় লয়েড জে অস্টিন ও বাণিজ্যমন্ত্রী জিনা রাইমোন্ডো। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য দপ্তরের সঙ্গে মিলে সম্মিলিতভাবে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা এবং তাতে সফল হওয়ার ওপর জোর দেন।
চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সফল হতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের কী করা প্রয়োজন, তা ব্যাখ্যা করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্টিন। তিনি বলেন, এ বছরের বাজেট প্রস্তাবে প্যাসিফিক ডিটারেন্স ইনিশিয়েটিভের (পিডিআই) জন্য আগের বছরের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি অর্থ লাগবে। পিডিআইয়ের জন্য ৯১০ কোটি মার্কিন ডলার চেয়েছেন তিনি।
অস্টিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কৌশলগত নির্দেশনা অনুযায়ী চীনকে মোকাবেলা করতে পুরো প্রতিরক্ষা দপ্তর সক্রিয়। তিনি বলেন, ‘চীন আমাদের একমাত্র প্রতিযোগী। পছন্দ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে নতুন আকার দেওয়ার অভিপ্রায় ও ক্ষমতা চীনের আছে।’
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল প্রসঙ্গে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলের দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের মতো অবাধ বাণিজ্য চায়। ওই দেশগুলো এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য অংশীদার।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্টিন বলেন, চীনের সঙ্গে সফল প্রতিযোগিতাসহ তার লক্ষ্য পূরণে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র ও অংশীদারদের ওপর নির্ভরশীল। পুরো মার্কিন প্রশাসন তার ইন্দো-প্যাসিফিক মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে কাজ করছে।
অস্টিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিকে তার বন্ধুদের নিরাপত্তা সহযোগিতা ও সাহায্য করছে। তিনি কোয়াড জোটসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অনুশীলনের উদাহরণ দেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন সিনেট কমিটিকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বড় ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হচ্ছে চীন। আমাদের অবাধ, উন্মুক্ত, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার লক্ষ্যকে চ্যালেঞ্জ করার আগ্রহ ওই দেশের (চীনের) আছে এবং তারা ক্রমেই সেই চ্যালেঞ্জ করার সক্ষমতা অর্জন করছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বেইজিং কোন পথে চলবে তার নির্দেশনা আমরা দিতে পারি না। আবার চীনের গতিপথ বদলানো পর্যন্ত আমরা অপেক্ষাও করতে পারি না। তবে আমরা চীনের চারপাশের বৃহত্তর কৌশলগত পরিবেশকে রূপান্তর এবং আমাদের লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতে তীব্র প্রতিযোগিতা করার জন্য নিজেদের শক্তিশালী করতে পারি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক গড়া এবং নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকারের কথা জানান।
বাণিজ্যমন্ত্রী জিনা রাইমোন্ডো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনকে মোকাবেলায় মার্কিন প্রশাসনের উদ্যোগগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘চীনের হুমকি মোকাবেলায় আমরা এর আগে কখনো আমাদের ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করতে এত আগ্রাসী ছিলাম না।’
অন্য দেশগুলোর সঙ্গে চীনের প্রতিরক্ষা বাহিনীর তৎপরতার দিকেও দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের: চীনের প্রতিরক্ষা বাহিনীর তৎপরতার দিকেও দৃষ্টি রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র এসংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে ২০২১ সালে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী উই ফেঙ্গের বাংলাদেশ সফরের প্রসঙ্গও এসেছে।
উই ফেঙ্গে ঢাকা সফরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কোনো কৌশলগত নিরাপত্তা জোটে যোগ দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক করেছিলেন। এরপর ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূতও এ বিষয়ে ব্যাখ্য করতে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত প্রতিরক্ষা উদ্যোগে যোগ দিলে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হবে।
বাংলাদেশ গত মাসে তার ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতার গত সপ্তাহে ঢাকা সফরকালে বলেছেন, বাংলাদেশের ওই কৌশলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের (আইপিএস) অভিন্নতা রয়েছে।
ভারত ও জাপানও বাংলাদেশের ওই রূপরেখার প্রশংসা করেছে। আবার ওই রূপরেখায় এমন বিষয় আছে, যা চীন সমর্থন করে।