বিশ্বাস করুন, আমি কিচ্ছু জানি না ফ্যাশন সম্পর্কে। আমাকে যে এরকম দেখায়, তার গোটা কৃতিত্ব আমার মেকআপ আর্টিস্ট আর স্টাইলিস্টের। তাঁদের কোনও তুলনা হয় না। আমি ফ্যাশনের জন্য দু’জনকে ফলো করি। এক, বেয়ন্সে। দুই, প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। আমি প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার পাগল ফ্যান।
আপনার বক্তব্য, আপনি নাকি জিমন্যাসটিক্সে ভাল নন। কিন্তু আপনার জিমন্যাস্টিক্স ভিডিয়ো দেখে সেটাও বিশ্বাস করা কঠিন…
আমি সত্যিই স্লো। ফ্রন্ট ফ্লিপ করার সময় আমি বেশিরভাগ সময় পিঠে ভর দিয়ে পড়ে যাই, যখন আমার ল্যান্ড করার কথা। ইনস্টাগ্র্যামে যে ভিডিয়োগুলো দেখেন, সেগুলো অনেকগুলো খারাপ ভিডিয়োর মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া। আসলে আমি খুব পেটুক। কিন্তু আমি আগের মতো চকোলেট বা পিৎজ়া খাই না। অনেকেই বলেন, তাঁরা সেভাবে ডায়েট ফলো করেন না। কিন্তু আমার মেটাবলিজ়ম অত ভাল নয়। আমাকে এই চেহারাটা রাখতে, ফিটনেস তৈরি করতে, প্রচুর খাটতে হয়। কড়া ডায়েট মেনে চলি। দিনে ছ’-সাত ঘণ্টা ওয়র্কআউট করি।
‘ভারত’-এ আপনি একজন ট্র্যাপিজ় আর্টিস্ট। আর প্রচুর জিমন্যাস্টিক্স করতে দেখা গিয়েছে আপনাকে। ‘বাগী ২’-এর মতো অ্যাকশন ফিল্মে আপনি কোনও অ্যাকশন করেননি। ইচ্ছে করে না অ্যাকশন ফিল্ম করতে?
ভীষণ ইচ্ছে করে জানেন। আসলে আমাদের দেশে এখনও একটা গোটা অ্যাকশন ছবি ফিমেল প্রোটাগনিস্ট নিয়ে করার কথা কেউ ভাবে না। হলিউডে কিন্তু ‘ক্যাপ্টেন মার্ভেল’, ‘লুসি’, ‘ওয়ান্ডার উয়োম্যান’ হচ্ছে। সাফল্যও পাচ্ছে। কিন্তু এটাও ঠিক যে, অ্যাকশন মুভি করার জন্য ভীষণ পরিশ্রম করা দরকার। ‘কুংফু যোগা’ ছবিতে জ্যাকি চ্যানের সঙ্গে কাজ করলাম, ‘বাগী ২’-এর শুটে টাইগারকে দেখলাম… অ্যাকশন করা ভীষণ কঠিন। আমি জানি না আমি ততটা তৈরি কিনা। কিন্তু এতদিন ধরে আমি জিমন্যাস্টিক্স করি, কিক বক্সিং করি, যখন ‘ভারত’-এর অফার পেলাম আর শুনলাম সার্কাসে ট্র্যাপিজ়ের খেলা দেখাতে হবে, তখন মনে হয়েছিল, এটাই সুযোগ সবাইকে দেখিয়ে দেওয়ার।
আপনি তো ছবি বাছার ব্যাপারে প্রচণ্ড খুঁতখুতে বলে শুনেছি। ‘বাগী ২’-এর পর কোনও ছবি সই করছিলেন না। ‘ভারত’-এ ক্যাটরিনার লিড, আপনার স্ক্রিন স্পেস কম। কেরিয়ারের এই সময়ে এরকম চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হলেন কেন?
আমি কিন্তু স্ক্রিপ্টে শুধু নিজের চরিত্রটা পড়ি। পুরো গল্পটা আমি পড়ি না। আমাকে আলি অব্বাস জ়াফর বলে দিয়েছিলেন চরিত্রটা ক্যামিও। কিন্তু যখন পার্টটা পড়লাম, রেফারেন্স ছবি দেখলাম, এককথায় হ্যাঁ বলে দিয়েছিলাম। আমি বলিউডি নাচ-গান খুব পছন্দ করি। আইটেম নাম্বার দেখে বড় হয়েছি। সলমন খানের সঙ্গে রোম্যান্টিক ডান্স নাম্বারে নাচার সুযোগ পাচ্ছি, আর কী চাই! না বলার প্রশ্নই ওঠে না।
আপনি যে খুঁতখুঁতে, সেব্যাপারে কিছু বললেন না তো?
আমি খুঁতখুঁতে নই, খুব ক্যালকুলেটিভ। আসলে এই কেরিয়ারটার জন্য বি.টেক পড়া ছেড়ে মুম্বই এসেছিলাম তো, এমন কিছু করতে চাই না, যাতে আমার কেরিয়ারটা থেমে যায়! আমি ফিল্ম পরিবার থেকে আসিনি। বাবা সরকারি কর্মচারি। আমার বোন খুশবু আর্মি লেফটেন্যান্ট। ভাই এখনও পড়ছে। আমি স্কুলে খুব পড়ুয়া ছিলাম। হেড গার্ল ছিলাম। বি.টেক পড়ার সময় ইন্দোরের মিস ইন্ডিয়া কম্পিটিশনে ফার্স্ট রানার আপ হই। ওখান থেকে মুম্বইয়ের বড় মডেলিং এজেন্সি থেকে ডাক পাই। ভাল ব্র্যান্ডের অ্যাড পাই। গরমের ছুটিতে ভাল পয়সা রোজগার করে নিজেকে খুব স্বাধীন মনে হয়েছিল। তাই ঠিক করি এই কাজটাই করব। আমার কোনও গাইড ছিল না। তাই প্রতি মুহূর্তে ভয় করে, ছবি ফ্লপ করলে পরের ছবিতে কেউ ডাকবে তো? তাই প্রতিটা পা মেপে ফেলার চেষ্টা করি। কাজে ফাঁকি দিই না।
ফাঁকি যে দেন না, তা তো সবাই জানে। ‘স্লো-মোশন’ গানের শুটিংয়ের এক সপ্তাহ আগে নাকি আপনি হাঁটুতে গুরুতর চোট পেয়েছিলেন, কিন্তু তারপরেও…
হ্যাঁ, জিমন্যাস্টিক্স কোচ নাদিম স্যার খুব কড়া মানুষ। একটা ফ্লিপ করতে গিয়ে হাঁটুতে ওই চোটটা পাই। প্রবল ব্যাথা, মাত্র এক সপ্তাহ রেস্ট পেয়েছিলাম। পুরো শুটটা ওই ব্যথা নিয়ে করেছি। সব স্টান্টও। শট দিচ্ছি আর আইসপ্যাক নিচ্ছি, এই আমার শিডিউল ছিল। এখনও হাঁটুর ব্যথাটা ভোগাচ্ছে।
আচ্ছা, আপনি আর টাইগার বলেন আপনারা ‘বেস্ট ফ্রেন্ডস’। কবে প্রেমটা স্বীকার করবেন বলুন তো?
বেস্ট ফ্রেন্ড তো বটেই। ইন্ডাস্ট্রিতে আমার একমাত্র বন্ধু টাইগার। আমি খুব আনসোশ্যাল, তা তো জানেনই। কোথাও যাই না। ঘরে বসে থাকি। ওর সঙ্গেই যেখানে যা বেরোই। তবে টাইগার ভীষণ স্লো জানেন। আমি চাই ব্যাপারটা বন্ধুত্ব থেকে বাড়ুক। ওকে ইমপ্রেস করতে জিমন্যাস্টিক্স করলাম, আগুনের রিংয়ের মাঝখান দিয়ে ফ্লিপ করলাম। তা-ও ইমপ্রেস করতে পারলাম না। কাউকে তো একটা বরফটা গলাতে হবে।