হাওয়ায় স্লো মোশনে উড়ছে কালো রঙের লেদার জ্যাকেট। চারদিক স্তব্ধ। ঘড়িতে সেকেন্ডের কাঁটা এগিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। সকলে অপেক্ষা করে রয়েছেন গ্র্যান্ড এন্ট্রির। নিস্তবদ্ধতা ভেঙে হঠাৎ হলে সিটি এবং হাততালির শব্দ। কারণ একটাই। পর্দায় তখন তাঁদের ‘ভাইজান’ চলে এসেছেন।
চলতি বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পাঠান’ ছবিতে শাহরুখ খানের সঙ্গে সলমনের জুটি দেখে মুগ্ধ সলমন অনুরাগীরা। দিন গুনছিলেন ইদের। চার বছর ধরে বড় পর্দায় শুধুমাত্র সলমনের ছবির জন্যই অপেক্ষা করছিলেন তাঁরা। অনুরাগীদের নিরাশও করেননি অভিনেতা। আগের বছরেই নিজের নতুন ছবির ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। তামিল ছবি ‘বীরম’-এর হিন্দি রিমেক করবেন বলে জানান তিনি। তবে এ বার আর ওটিটি প্ল্যাটফর্মে নয়। ২১ এপ্রিল, শুক্রবার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেল ফারহাদ সামজি পরিচালিত সলমনের নতুন ছবি ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’। সলমন ছাড়াও এই ছবিতে রয়েছেন একাধিক নতুন মুখ। কিন্তু ইদের উপহার হিসাবে পর্দায় আদৌ জমল কি ‘ভাইজানের’ সিনেমা?
‘সলমনযাপন’ বেশি হল এই ছবিতে? চমক দেওয়ার সুযোগ কোথাও যেন একচুলও ছাড়তে দেখা গেল না অভিনেতাকে। গ্র্যান্ড এন্ট্রি থেকে শুরু করে জোরদার সংলাপ— সবই যেন ‘সিটি মার’ মুহূর্ত। তবে অভিনেতা যদি প্রতিনিয়ত নিজের পিঠ নিজেই চাপড়াতে থাকেন, তা হলে তা বিরক্তির কারণ হয় বইকি। তামিল ছবির অনুকরণ হলেও ছবির প্রয়োজনে চিত্রনাট্যের মধ্যে বদল এনেছেন পরিচালক। বদল এসেছে সলমনের লুকেও। চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে কখনও লম্বা চুলে, কখনও ছোট চুলে, কখনও বা শার্টলেস লুকেও পর্দায় দেখা গিয়েছে অভিনেতাকে।
ফ্যামিলি ড্রামার সঙ্গে অ্যাকশন ঘরানার পুরোদস্তুর মিশেল ঘটেছে ছবিতে। কিন্তু সব কিছুই যেন প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত। সলমনের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যায় পূজা হেগড়েকে। ভাগ্যলক্ষ্মীর চরিত্রে সাবলীল অভিনয় করেছেন তিনি। পূজা ছাড়াও এই ছবিতে রয়েছেন দগ্গুবতী ভেঙ্কটেশ, জগপতি বাবুর মতো একাধিক দক্ষিণী অভিনেতা। অতিথিশিল্পী হিসাবে দেখা যাবে রাম চরণকেও। সকলেই নিজেদের চরিত্র পর্দায় নিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এই ছবিতে সলমন তাঁর ছবির পুরনো নায়িকাদেরও সুযোগ দিয়েছেন। ভাগ্যশ্রী এবং ভূমিকা চাওলাকে পর্দায় ক্ষণিকের জন্য দেখেও ভাল লাগে। যদিও চিত্রনাট্যের খাতিরে তাঁদের চরিত্রবিন্যাসের উপর তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
কিন্তু এই ছবির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হয়ে দাঁড়িয়েছে চিত্রনাট্য এবং একাধিক পার্শ্বচরিত্র। শেহনাজ় কৌর গিল, পলক তিওয়ারি, সিদ্ধার্থ নিগম, জেসি গিলের মতো নবাগত তারকারা পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু সেই হিসাবে কারও চরিত্রের বুনন মজবুত নয়। ছবিতে যেন অযথা ভিড় বাড়িয়েছেন তাঁরা।
গল্পের বুননেও ফাঁক চোখে পড়তে বাধ্য। সম্পূর্ণ ছবিই যেন সলমনকেন্দ্রিক। যেন তাঁকে উদ্যাপন করার জন্যই এই ছবি। কিন্তু তার মধ্যেই অভিনেতা কখন যেন তাঁর অনুরাগীদের মন কেড়ে নেন। ছবির প্রথমার্ধ যতটা ধীর গতির, দ্বিতীয়ার্ধ ঠিক ততটাই গতিশীল। অ্যাকশন ঘরানার ছবিতে যে ধরনের রোমাঞ্চ প্রয়োজন, তার অভাব রয়েছে পরতে পরতে। তারকাখচিত ছবি হওয়া সত্ত্বেও কারও অভিনয় নজর কাড়বে না। গল্প খানিকটা এগোতে না এগোতেই বারংবার গানের ব্যবহার ছবিটির গতি আরও ধীর করে তুলেছে।
এই ছবিতে সলমনের চরিত্রের জন্য আলাদা কোনও নাম রাখা হয়নি। অনুরাগীদের দেওয়া প্রিয় ‘ভাইজান’ নামটিই নিজের জন্য বেছে নিয়েছেন সলমন। ছবির মধ্যে নিজেকে নিয়েই মজা করতে দেখা গিয়েছে অভিনেতাকে। তবে, যাঁর কথা না বললেই নয়, তিনি হলেন দগ্গুবতী। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভাগ্যলক্ষ্মীর দাদার চরিত্রে দগ্গুবতীর অভিনয় দুর্দান্ত। কিন্তু অন্তিম পর্বে অ্যাকশন দৃশ্যে কাঁপিয়ে দিয়েছেন তিনি। এমনকি, নাচের দৃশ্যেও বলে বলে ছয় মেরেছেন দগ্গুবতী।
কিন্তু আড়াই ঘণ্টার এই ছবিতে পরিচালক একই পাতে বাঙালি খাবার থেকে শুরু করে চাইনিজ়, কন্টিনেন্টাল সব একসঙ্গে পরিবেশন করতে গিয়ে কিছুই জমাতে পারলেন না। শেষমেশ এই ছবি রয়ে গেল সলমন এবং তাঁর একান্ত অনুরাগীদের জন্যই।