আজ লাতিনের শৈল্পিক আর ইউরোপের গতিময় ফুটবলের দ্বৈরথ। কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার
ফাইনাল পর্ব শুরু হচ্ছে শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) রাত থেকে। প্রথম দিনেই ভিন্ন ম্যাচে মাঠে নামছে
ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় মুখোমুখি হবে ব্রাজিল ও ক্রোয়েশিয়া। আর
দিবাগত রাত ১টায় নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা।
দুই খেলাতেই ইউরোপ আর লাতিন প্রতিপক্ষ হওয়ায় বিশ্বকাপের রোমান্স অন্যরকম মাত্রা পাবে
নিঃসন্দেহে
ফুটবলে ইউরোপ-লাতিন আমেরিকার দ্বৈরথটা অনেকটা ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান’
টাইপ। তাই কে ভালো খেলে, এ নিয়ে বিতর্কটাও সমানে সমান। বলা যায়, ফুটবলের বয়স যত,
এ তর্কের বয়সও ঠিক ততটাই। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এই বিতর্ক। বিশ্বকাপ এলে এই তর্কের
পালে নতুন করে হাওয়া লাগে।
ফুটবলের সূতিকাগার বলা হয় ইংল্যান্ডকে। জন্ম চীনে বলা হলেও বেড়ে ওঠা, একটি সাধারণ
খেলা থেকে আজকের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলায় রূপ দেওয়ায় সিংহভাগ কৃতিত্ব ইংল্যান্ড তথা
ইউরোপের। অপরদিকে ফুটবলের ধারক-বাহক সবই বলা যেতে পারে লাতিনদের। ফুটবলের
আজকের জনপ্রিয়তার পেছনে লাতিনদের অবদান কম নয়।
লাতিনদের শৈল্পিক ফুটবল আর ইউরোপের গতি, এই হলো মোদ্দা পার্থক্য। কিন্তু জলবায়ু
পরিবর্তনের ফলে ঋতুচক্রের নিজস্বতা যেমন অনেকখানি হারিয়ে গেছে, তেমনি নানান
মিথক্রিয়ার ফলে বর্তমানে ফুটবলের শৈল্পিক ধারার একমাত্র মালিক লাতিন নয় একইভাবে
গতিময় ফুটবলের একমাত্র মালিকও ইউরোপ নয়।
লাতিন ফুটবলার পেলে-ম্যারোডোনার নাম জানে না এমন মানুষ পৃথিবীতে কমই আছে। শুধু কি
এই দুজন, আরও কত গ্রেটরা দ্যুতি ছড়িয়েছেন লাতিন ফুটবলে, তার হিসাব রাখা সত্যিই
মুশকিল। লিউনিডাস, স্টাবিল, গ্যাবিঞ্চা, ভাভা, ম্যারাডোনা, জিকো, সক্রেটিস, রোনালদো,
রোনালদিনহো, কাকা প্রমুখরা লাতিন ফুটবলকে সমৃদ্ধ করেছেন। অপরদিকে বেকেনবাওয়ার,
মোয়ান ক্রুয়েফ, রুমেনিগে, পাওলো রসি, লোথার ম্যাথিউস, জিনেদিন জিদান, বেকহামদের
অবদানও ইউরো ফুটবলে কম নয়।
এবার বিশ^কাপ প্রসঙ্গে আসা যাক। ইতিহাস বলে, এ পর্যন্ত বিশ্বকাপের ২১টি আসর আয়োজন
হয়েছে। এর মধ্যে ইউরোপ মহাদেশ দলগুলো শিরোপা জিতেছে মোট ১২বার। আর লাতিন
আমেরিকা বা দক্ষিণ আমেরিকা জিতেছে ৯ বার, এছাড়া অন্য আর কোনো মহাদেশের দল স্বপ্নের
বিশকাপ ট্রফি ছুঁয়ে দেখতে পারেনি। যদিও বিশ্বকাপের উদ্বোধনী আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল
লাতিন আমেরিকার দেশ উরুগুয়ে। আর এরপরের আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় ইউরোপের ইতালি।
লাতিন আমেরিকার হয়ে সর্বশেষ বিশ্বকাপ জিতেছে ব্রাজিল ২০০২ সালে। আর ইউরোপের হয়ে
জার্মানি ২০১৪ সালেএবং ফ্রান্স ২০১৮ সালে।। অর্থাৎ গত চার আসর ধরে ট্রফি ইউরোপের
ঘরেই যাচ্ছে। তাই এক কথায় বলা যায় ফুটবলীয় শক্তির এই লড়াইটা মূলত ইউরোপ ও দক্ষিণ
আমেরিকার মধ্যে। যেখানে অন্য মহাদেশের দেশগুলো অংশগ্রহণকারী দেশ মাত্র।