ইউক্রেনকে সাহায্য দেয়া কমিয়ে দেবে যুক্তরাষ্ট্র !
আমেরিকানরা যখন জীবনযাপনের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে - তখন ইউক্রেনকে সাহায্য দেবার যৌক্তিকতা কতটুকু ?
কিছু দিন পরেই শুরু হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন। ঠিক এই সময়ই রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ নেতারা হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে তারা যদি কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ দখল করতে পারেন – তাহলে তারা ইউক্রেনকে সাহায্য দেয়া কমিয়ে দেবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যেখানে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকেই বড় এক সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে – সেখানে যুক্তরাষ্ট্র যদি এমন কোন ভূমিকা নেয় তাহলে তা ঘটনাপ্রবাহের গতিপথই বদলে দিতে পারে।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি অনলাইনে একটি ভিডিও পোস্ট করেছে – যাতে দেখা যাচ্ছে এমন এক দৃশ্য যা রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির যুদ্ধের মোড় বদলে দিয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে মার্কিন-নির্মিত হিমার্স রকেট নিক্ষেপের দৃশ্য।
একটা আগুনের লেজ তৈরি করে রকেটটি ওপরের দিকে উঠলো। তার পর সেটি যখন লক্ষ্যে আঘাত করলো – তখন তৈরি হলো এক বিশাল আগুনের গোলা, যা রাতের আকাশকে আলোকিত করে তুলল।
ইউক্রেনকে মোট ১৮টি হিমার্স রকেট দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র – যার পুরো নাম হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম ।
এটি হচ্ছে আমেরিকানরা ইউক্রেনকে যে ৫,২০০ কোটি ডলারের সামরিক সাহায্য দিয়েছে তারই একটা অংশ। বাকি সব দেশ মিলে ইউক্রেনকে যে পরিমাণ সাহায্য দিয়েছে – এ পরিমাণ তার দ্বিগুণ বেশি।
সাবেক মার্কিন মেরিন কর্নেল এবং প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ মার্ক কানসিয়ান বলেন, ইউক্রেনের সরকার তো বটেই, সামরিক বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, এই সহায়তা তাদের মিশনের জন্য অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটা না দিলে ইউক্রেনীয়ানরা সম্পূর্ণ পরাভূত হয়ে যেত।
কিন্তু অচিরেই হয়তো এই সামরিক সাহায্য আর পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিতে পারে।
কারণ কিছু রিপাবলিকান আইন প্রণেতা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। তারা বলছেন, আমেরিকানরা যখন জীবনযাপনের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে – তখন এসব সাহায্য দেবার যৌক্তিকতা কতটুকু?
অক্টোবর মাসেই প্রথম দিকে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যালঘু রিপাবলিকানদের একজন নেতা কেভিন ম্যাককার্থি আভাস দিয়েছিলেন যে কংগ্রেসে যদি রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে তারা ইউক্রেনকে ‘ব্ল্যাংক চেক’ দিতে অতটা আগ্রহী হবে না।
মে মাসে মিসৌরি রাজ্যের সিনেটর জশ হাউলি বলেন, ইউক্রেনকে সাহায্য দেয়া আমেরিকার স্বার্থের অনুকুল নয় এবং এটা ইউরোপকে এই উদারতার সুযোগ নেবার রাস্তা করে দেবে।
দৃশ্যত এসব মন্তব্যে রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে একটা বিভক্তির আভাস পাওয়া যায়। কারণ, এই রিপাবলিকান পার্টিরই ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স অতীতে কঠোর ভাষায় তার নিজের দলে যারা ‘ভ্লাদিমির পুতিনের পক্ষে সাফাই গায়’ তাদের নিন্দা করেছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি এও বলেছিলেন যে এদের কারণে বাকি বিশ্বের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে।
সিনেটের রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল হোয়াইট হাউসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন ইউক্রেনকে সাহায্য দেয়া দ্রুততর করা হয়।
কারণ তার ভাষায়, রুশ আগ্রাসন ঠেকাতে ইউক্রেনের যা যা দরকার সেটা সরবরাহ করতে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বেশি কিছু করতে হবে।
কিছুদিন আগে ইউক্রেনের জন্য ৪ কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজের পক্ষে যারা ভোট দিয়েছিলেন তারা সবাই রিপাবলিকান। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ৫৭ জন বিপক্ষে ভোট দেন, আর উচ্চকক্ষ সেনেটে দেন ১১ জন।
ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে পার্লামেন্টের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সিলেক্ট কমিটির চেয়ারম্যান টোবায়াস এলউড এমপি বলেন, আমেরিকা যদি সরে যায়, তাহলে পুতিন হয়তো পরাজয়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে জয় ছিনিয়ে নেবেন।
কিন্তু ইউক্রেনের কর্মকর্তা এবং মার্কিন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নভেম্বর মাসের মধ্যবর্তী নির্বাচনে যাই হোক না কেন – ইউক্রেনকে দেয়া মার্কিন সাহায্যের পরিমাণ অন্তত স্বল্পমেয়াদে কমে যাবে এমন সম্ভাবনা কম।
বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সেই রেজনিকভ বলেছেন, মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সাথে তার যেসব বৈঠক হয়েছে – তাতে তিনি আস্থাশীল যে মধ্যবর্তী নির্বাচনে যাই হোক – ইউক্রেনের জন্য উভয় দলের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।
তিনি যাদের সাথে কথা বলেছেন তাদের মধ্যে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান উভয় দলের আইনপ্রণেতারাই ছিলেন।
জনমত জরিপে অবশ্য দেখা যায় যে ইউক্রেনকে সাহায্য করার পক্ষে আমেরিকানদের সমর্থন এখনো ব্যাপক। কিন্তু যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হতে থাকায় এ সমর্থন যে কিছুটা মিইয়ে এসেছে – তার আভাসও পাওয়া যায়।
গতমাসে এক জরিপে দেখা যায়, ২০ শতাংশ আমেরিকান মনে করে যে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে খুব বেশি সাহায্য দিচ্ছে। পিউ রিসার্চের মতে – গত মে মাসেও এমন চিন্তাভাবনার লোক ছিলেন ১২ শতাংশ এবং মার্চ মাসে তাদের অনুপাত ছিল মাত্র ৭ শতাংশ।
তবে এখনো বিপুল সংখ্যাক আমেরিকানই ইউক্রেনকে অব্যাহ সাহায্য দেবার পক্ষে। এ মাসের প্রথম দিকে এর পরিমাণ ছিল ৭৩ শতাংশ।