রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকার সাদিক অ্যাগ্রোর অফিসের একাংশ ভেঙে দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অভিযান পরিচালনা করেন ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব হাসান।
ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদ বলেন, রামচন্দ্রপুর খালের দুই ধারে যারা অবৈধ দখলদার ছিলো তাদের বিরুদ্ধে আমাদের এ অভিযান। খালের জায়গা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সিটি করপোরেশন থেকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর আগেও এখান থেকে উত্তর সিটির মেয়র ট্রাক স্ট্যান্ড সরিয়েছেন এবং বহুতল ভবন ভেঙ্গেছেন। খাল দখলমুক্ত করতে এটা আমাদের নিয়মিত অভিযানের অংশ।
তিনি আরও বলেন, আজকের অভিযানে দেখেছেন রামচন্দ্রপুর খালের তীর দখল করে স্থাপনা করা হয়েছে। সেই স্থাপনা দখল উচ্ছেদ করা হয়েছে। কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়, সবাইকে আইন মেনে ব্যবসা করতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান নয়। আমাদের অভিযান অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে। সাদেক এগ্রোর মালিককে ঈদের আগেও আমরা নোটিশ দিয়েছি। অবৈধ স্থাপনা থাকলে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। আমরা ঈদের আগে উচ্ছেদ অভিযান চালাই নি। কারণ এর ফলে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতো। আমরা এমনটা চাই নি বলে উচ্ছেদে যাই নি। সেই নোটিশেরও এগ্রো ফার্মের মালিক কোনো তোয়াক্কা করেননি।
এছাড়াও, খালের ৩০ ফিটের ভেতরে কোনো স্থাপনা থাকতে পারবে না এই নীতিমালা রয়েছে। জমির মালিক কাগজ দেখিয়েছেন ৪ শতাংশের কিন্তু দখল করেছেন এক বিঘা। আর আমরা উচ্ছেদ করেছি অবৈধ স্থাপনা জমির মালিককে না। খালের ভেতরের যে অংশ আছে সেটা আমরা উচ্ছেদ করেছি।
উত্তর সিটি করপোরেশনের এই কর্মকর্তা বলেন, অভিযানে একজন জমির মালিক এসেছিলো। সাদেক এগ্রোর মালিক বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কেউ আসে নি। আর সাদেক এগ্রোকে গত ১৮ জুন নোটিশ করা হয়েছে যেন খালে বর্জ্য না ফেলে। কিন্তু তারা কোনো সহযোগিতা করেনি। আমরা খালের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করছি। এরপর আমরা পরবর্তীতে আমরা খাল পরিস্কার অভিযান চালাব।
এ বিষয়ে সাদিক অ্যাগ্রোর কর্মকর্তা জাহিদ হাসান বলেন, মোহাম্মদপুরে যে স্থাপনাতে গরুর খামার করা হয়েছে সেটি ভাড়া নিয়ে করা হয়েছে। খাল দখলের সঙ্গে সাদিক অ্যাগ্রো জড়িত নয়। অন্যের নির্মিত স্থাপনায় গরুর খামার করা হয়েছে। এখানে এরকম আরও অনেক স্থাপনা আছে। সিটি করপোরেশন এখন পর্যন্ত সাদিক অ্যাগ্রোকে এ বিষয়ে কখনোই কোনো নোটিশ করেনি।
জানা যায়, অভিযানে সাদিক অ্যাগ্রো ছাড়াও বেশ কিছু অস্থায়ী স্থাপনা এখানে গড়ে উঠেছিল, সেগুলোও উচ্ছেদ করছে ডিএনসিসি। দখলের কারণে মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর খাল নালাতে পরিণত হয়েছে।
সাদিক এগ্রোর মালিক মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন বলেন, আমি এই জমির মালিক না, একজন ভাড়াটিয়া। তাই উচ্ছেদ অভিযানে আমার কিছু যায় আসে না।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন যে জায়গাটা খাল বলে দাবি করছে, সেটির মালিক আমি না। জমির মালিক তার জায়গায় স্থাপনা করেছেন, আমি নিচতলা ভাড়া নিয়েছি। মালিক নিজেই দ্বিতীয়তলায় থাকেন। খাল ভরাটসহ যা কিছু বলা হচ্ছে সবই মালিকের করা। আমার কিছুই না।
খামারটির মালিক বলেন, আমি যে ভাড়া নিয়েছি এটার ডিড (চুক্তি) আমার কাছে আছে। তাই আমি এটার মালিক… বললেই হবে না। আমি খালসহ ভাড়া নেইনি।
অভিযানে ডিএনসিসির অভিযান পরিচালনাকারী দলের সদস্যরা ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে পরিচ্ছন্নতা কর্মী অংশ নেন। এছাড়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত ছিল।