মাহজাবিন চৌধুরী , আলাস্কা
ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি ২০২২ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকতেন, তবে ইউক্রেন আক্রমণ করত না রাশিয়া। পূর্ব ইউরোপে কোনও যুদ্ধই হত না। কিন্তু আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কথা শোনেননি। তাই ইউক্রেন আক্রমণ করতে বাধ্য হয় রাশিয়া। শুক্রবার আলাস্কায় ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক সেরে এমনটা জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আমেরিকা এবং রাশিয়ার সম্পর্ক ‘মেরামত’ করা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। এ সময় ট্রাম্প তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ থামানোর কথা বলে আসছেন ট্রাম্প। বার বার তিনি দাবি করেছেন, ২০২২ সালে ক্ষমতায় থাকলে এ যুদ্ধ তিনি শুরু হতে দিতেন না। শুক্রবারের সাংবাদিক বৈঠকে কার্যত সেই দাবিকেই মান্যতা দিলেন পুতিন। বাইডেনের সঙ্গে সে সময় তাঁর কী কথা হয়েছিল, তা-ও জানালেন। পুতিন বলেছেন, ‘‘মনে রাখবেন, ২০২২ সালে আমেরিকার পূর্বতন সরকারের সঙ্গে আমি যখন যোগাযোগ করেছিলাম, আমার মার্কিন সহকর্মীকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। খুব স্পষ্ট করেই ওঁকে বলেছিলাম, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়, যেখান থেকে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে এবং তা আর ঠেকানো যাবে না। বলেছিলাম, বড় ভুল হচ্ছে।’’
বাইডেনের নাম করেননি পুতিন। ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে এর পর তিনি বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমার খুব ভাল, ব্যবসায়িক এবং বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আমার বিশ্বাস, এই পথে চললে শীঘ্রই আমরা ইউক্রেন সমস্যার সমাধানে পৌঁছোতে পারব।’’
রাশিয়া এবং আমেরিকার সম্পর্কের অতীত খুব একটা মসৃণ নয়, মেনে নিয়েছেন পুতিন। জানিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি মেরামত করা প্রয়োজন। ট্রাম্পের কথার ধরন ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ হওয়ায় তাঁর সঙ্গে আলোচনায় সুবিধা হয়েছে রুশ প্রেসিডেন্টের। ট্রাম্প এবং পুতিন উভয়েই আলাস্কার বৈঠককে ‘ফলপ্রসূ’ এবং ‘ইতিবাচক’ বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত এই বৈঠকে হয়নি। ট্রাম্প মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এর পর বাকিটা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির উপর নির্ভর করছে। তাঁকে পুতিনের সঙ্গে চুক্তি করার পরামর্শ দিয়েছেন ট্রাম্প। জানিয়েছেন, এর পর পুতিন এবং জ়েলেনস্কির মধ্যে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হতে পারে। ওঁরা চাইলে ট্রাম্পও সেই বৈঠকে থাকবেন।
২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর আমেরিকা তাদের উপর একাধিক বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে এর পর খনিজ তেলের দাম কমিয়ে দিয়েছিল মস্কো। তার পর থেকে ভারত তাদের থেকে সস্তায় তেল কিনে থাকে। আমেরিকা সম্প্রতি এতে আপত্তি জানিয়েছে। দাবি করা হয়েছে, ভারত তেল কেনার ফলে রাশিয়ার আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটছে এবং সেই টাকা তারা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহার করছে। ফলে তাতে যুদ্ধে সুবিধা হচ্ছে। ভারতের উপর এই অজুহাতে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। পরেই আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে তাঁর এই বৈঠক।