পিপলস লিজিংয়ের পরিচালকরা আমানতকারীদের টাকা আত্নসাৎ করে চট্টগ্রামে হোটেল রেডিসন ব্লু এবং বান্দরবানে রিসোর্ট চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির আমানতকারীরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বা ব্যাংক হিসাবও জব্দ না করার অভিযোগ তাদের।
সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠক করেন পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীদের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। বৈঠক শেষে তারা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। পাঁচ আমানতকারী হলেন, সামিয়া বিনতে মাহবুব, কামাল আহমেদ, রানা ঘোষ, প্রশান্ত কুমার দাস ও আনোয়ারুল হক।
আমানতকারী সামিয়া বিনতে মাহবুব বলেন, পিপলস লিজিংয়ের বর্তমান পরিচালকরা আমাদের টাকা মেরে দিয়েছে। এদের মধ্যে পরিচালক উজ্জল কুমার নন্দী আমানতকারীদের টাকা মেরে চট্টগ্রামে হোটেল রেডিসন ব্লু খুলেছেন। অথচ এখনো তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়নি। আরেকজন পরিচালক অং মং চং আমানতকারীদের টাকা মেরে বান্দরবানে বড় রিসোর্ট চালাচ্ছেন। তাদের অর্থ আত্মসাতের প্রমাণপত্র সব জায়গায় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের ব্যাংক হিসাব ‘ফ্রিজ’ করা হয়নি। অথচ পিপলসের পরিচালকরাই সব টাকা সরিয়ে নিয়েছেন। আমানতকারীদের টাকা নিয়ে তারা আরাম আয়েশে জীবনযাপন করছেন। আর আমরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি টাকা ফেরত পাওয়ার আশায়।
তিনি বলেন, পিপলস লিজিং একটি সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি ছয় মাস পর পর কিংবা বছর বছর অডিট হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটির মনিটরিংয়ের দায়িত্বে ছিল। তারা কিভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন, এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে এই অনিয়মগুলো আগে ধরা পড়েনি কেনো। বাংলাদেশে ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকেও আমরা তা তুলে ধরেছি।
আমানতকারী আনোয়ারুল হক বলেন, গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে আমাদের প্রধান দাবি ছিল, আমরা টাকা ফেরত পাচ্ছি কিনা? পেলে কবে নাগাদ পাচ্ছি। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কি ব্যবস্থা নিয়েছে। এ বিষয়গুলো আমরা বৈঠকে তুলে ধরেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দিতে তারা প্রয়েজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
তিনি বলেন, আমানতকারীরা কবে নাগাদ টাকা ফেরত পাবে, তার কোনো সময়সীমা দিতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়াও, বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক আনুপাতিক হারে টাকা ফেরত দেওয়া এবং জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার কথাও বলেছেন।
তিনি বলেন, পিপলস লিজিং আমানতকারীদের টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে। ওই টাকা থেকে কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা উঠলে সেই টাকা আদালতের নির্দেশে অনুপাতিকহারে ভাগ করে দেওয়া হবে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) ও পিপলসের অবসায়ক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খান বলেন, পিপলস লিজিংয়ের টাকা কোন পরিচালক আত্মসাৎ করেছে কিনা তা স্পেশাল অডিট করার পর বোঝা যাবে। আমানতকারীরা পরিচালকদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছে সেটা আমার শুনেছি। এই অভিযোগ অডিটে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তাই অডিট কার্যক্রম শেষ হলে যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে গত ২১ মে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থমন্ত্রণালয়ের কাছে পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের আবেদন করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৬ জুন অর্থমন্ত্রণালয় তা অনুমোদন করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিং থেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করে। পরে গত ১৪ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খানকে অবসায়ক নিয়োগ দেওয়া হয়। সর্বশেষ পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (পিএলএফসিএলি) এর দায় দেনা হিসাব করতে একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। অডিট ফার্মটিকে পিপলসের ২০১৫ সাল থেকে পরবর্তী চার বছরের আয় ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষা করার দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
পিপলসের কাছে পাওনা টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে সবার আগে সরকারের ট্যাক্স বাবদ টাকা পাওনা থাকলে তা পরিশোধ করা হবে। তারপর প্রতিষ্ঠানটির কর্মরতদের প্রত্যেককে ১ হাজার টাকা করে এবং দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে কেউ থাকলে তাদের ৫০০ টাকা করে পরিশোধ করা হবে।
পরবর্তীতে কোম্পানির আমানতকারীদের মধ্যে সবার আগে ব্যক্তি শ্রেণীর আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধ করা হবে। তারপর প্রতিষ্ঠানিক আমানতকারীর পাওনা পরিশোধ করা হবে। তবে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা কিছু পাবেন না। এইক্ষেত্রে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী কিংবা উদ্যোক্তা পরিচালক সবাই মালিক। তবে তারা পাবেন যদি আগের ধাপের সবার টাকা পরিশোধ করার পর টাকা অবশিষ্ট থাকে।