ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে বলেন, “আমাদের অস্তিত্বের প্রতি হামলা এসেছে, হুমকি এসেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা আমাদের করতেই হবে। কাজেই আপনারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুত হয়ে যান।”
বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে ঢাকা জেলা ও ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তেজগাঁও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কেন রাস্তাঘাট দখল করতে যাবে, সহিংসতায় জড়াবে? এই আন্দোলনের নেতৃত্ব নিঃসন্দেহে অশুভ শক্তির হাতে চলে গেছে। সেই অবস্থায় আমরা নিশ্চুপ থাকতে পারি না।”
তিনি বলেন, “আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করি, লালন করি, বিশ্বাস করি, সেই চেতনায় বিশ্বাসীরা; আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না। আমাদের অস্তিত্বের প্রতি হামলা এসেছে, হুমকি এসেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা আমাদের করতেই হবে। কাজেই আপনারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুত হয়ে যান। এখানে বেশিক্ষণ আপনাদের ধরে রাখতে চাই না। যার যার এলাকায় যান, আজকেও তাদের ভয়াবহ তাণ্ডব সৃষ্টির অ্যাজেন্ডা আছে, বিধ্বংসী এজেন্ডা আছে।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, “এখানে শুধু পুলিশের শক্তি নয়, আমাদের দল, দলের যে শক্তি। যে শক্তি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ করেছে, যে শক্তি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্রকে শৃঙ্খল মুক্ত করেছে, সেই শক্তি হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আমাদের এই শক্তিকে আজ কাজে লাগাতে হবে। আমাদের যার যার দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হবে।”
দলের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আমাদের সারাদেশের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে আমাদের নেত্রীর পক্ষ থেকে নির্দেশ দিচ্ছি, সারাদেশে সতর্ক হয়ে শক্ত অবস্থান নিয়ে এই অশুভ অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। কোনো অপশক্তির সঙ্গেও আপস করা যাবে না।”
তিনি বলেন, “বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাহেব দম্ভ করে বলেছেন, আমরা যা পারি নাই ছাত্ররা তা করিয়ে দেখিয়েছে। এতে বোঝা যায় কোটার দাবিতে তারা নামেনি। তারা নির্বাচিত সরকারকে হটাতে চায়। ক্ষমতা দখলের জন্য কতটা মরিয়া হলে তারা শিশু-কিশোরদের মিছিল ব্যবহার করে। ছাত্রদল ও শিবিরের কর্মীরা উসকানিমূলক স্লোগান, তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের স্ট্যাটাস আন্দোলনকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে পরিণত করেছে।”
সেতুমন্ত্রী বলেন, “বিএনপির এক নেতার ফোনালাপের অডিও ক্লিপ থেকে বোঝা গেছে ছাত্রদলের ক্যাডারদের সংঘর্ষ হামলার নির্দেশ দিচ্ছে। এতে প্রমাণ হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগকে পুঁজি করে বিএনপি-জামায়াত আবারও সহিংসতার প্রতি হাঁটছে। তারা তাদের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী সারা বাংলাদেশ থেকে এনে এই শহরে গুপ্ত হত্যা করা শুরু করেছে। আরও অনেক বাজে পরিস্থিতি, ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির আহ্বান জানাচ্ছে, উসকানি দিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই বিষয়গুলো আমরা জানতে পেরেছি।”
বিএনপি সারাদেশ থেকে ক্যাডার বাহিনী, প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসীদের ঢাকায় এনেছে উল্লেখ করে কাদের বলেন, “নাশকতা ও নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিএনপির পল্টন কার্যালয়ে গতকাল রাতে ৫/৬ বোতল পেট্রোল, বিপুল সংখ্যক লাঠিসোঁটা, ৬০ টি দেশি-বিদেশি অস্ত্র, শতাধিক ককটেল জড়ো করেছিল যা পুলিশের তল্লাশিতে উদ্ধার করা হয়।”
শিক্ষার্থীদের পিতামাতার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে কাদের বলেন, “আপনাদের প্রাণপ্রিয় সন্তানদের এই ধরনের আত্মবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখার। কারণ বিএনপি জামায়াতের সশস্ত্র ক্যাডাররা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব তারা নিজেরাই গ্রহণ করেছে। এই সশস্ত্র ক্যাডাররা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা চরিতার্থ করার জন্য হত্যা, গুপ্ত হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। অভিভাবকদের অনুরোধ করবো তাদের সন্তানদের বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার বাহিনীর এই আন্দোলন থেকে দূরে রাখার।”
সরকার সবসময় ছাত্রসমাজের দাবির প্রতি সহনশীল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আমাদের রাষ্ট্রের অভিভাবক। সকলের যৌক্তিক দাবি তার বিবেচনায় রয়েছে। আমরা আন্দোলনকারীদের বলব, আইনের পাশে থাকুন। সর্বোচ্চ আদালতের নির্ধারিত তারিখের শোনানির জন্য অপেক্ষা করুন। ধৈর্য ধারণ করুন। কোনও অপশক্তির উসকানি বা ষড়যন্ত্রে পা দেবেন না। ফাঁদে পা না দিয়ে অপেক্ষা করুন। তরুণ প্রজন্মের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করি।”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে দেশের অর্জিত গণতন্ত্র উন্নয়ন অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। আসুন আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সর্বশক্তি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সব শক্তি নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলি।”
এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, শাজাহান খান, কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম প্রমুখ।